মুম্বই: বলিউডে কান পাতলে শোনা যায় নানা কাহিনী৷ এমনই এক কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে বচ্চন ও কাপুর পরিবারের অন্দরেও৷
দু’দশক আগে বলিউডে পা রেখেছিলেন করিনা কাপুর৷ অভিষেক হয়েছিল বচ্চন পরিবারের হাত ধরেই৷ ২০০০ সালে অভিষেক বচ্চন এবং করিনা বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন ‘রিফিউজি’ ছবির মাধ্যমে৷ কিন্তু বচ্চন-পুত্রের মন বাঁধা পড়ে করিনার দিদি করিশ্মা কাপুরের সঙ্গে৷ আর করিশ্মার জন্যই নাকি, একের পর এক সুপারহিট হিন্দি ছবি থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল করিনাকে!
২০০২ সালে পর্দায় প্রথমবার জুটি বাঁধেন অভিষেক এবং করিশ্মা৷ ‘হা ম্যায়নে ভি প্যার কিয়া’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন তাঁরা৷ সেই সময় থেকেই বলিপাড়ায় কানাঘুষো, অভিষেক এবং করিশ্মা নাকি পাঁচ বছর আগে থেকেই সম্পর্কে রয়েছেন। তাঁদের প্রেম এতটাই গভীর যে, বিয়ের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন৷ ২০০২ সালেই বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিনে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেন তাঁরা। যদিও আংটিবদলের পর আর বেশি দিন সম্পর্ক টেকেনি এই তারকা জুটির। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দু’জনের সম্পর্ক ভেঙে যায়৷
তবে তাঁদের বিচ্ছেদের কারণ আজও অজানা৷ কারণ, এই নিয়ে কোনও পরিবারই কখনও মুখ খোলেনি। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০৩ সালে শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন করিশ্মা। কিন্তু সেই বিয়েও টেকেনি৷ ২০১৪ সালে সঞ্জয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় অভিনেত্রীর।
এদিকে, করিশ্মার সঙ্গে বিচ্ছেদের চার বছরের মধ্যে ঐশ্বর্যা রাইকে বিয়ে করেন অভিষেক বচ্চন। সেই সময় করিশ্মা এবং অভিষেকের বিচ্ছেদের প্রভাব পড়ে করিনার কেরিয়ারে। একাধিক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফেরান তিনি। যে ছবিগুলিতে অমিতাভ এবং অভিষেক অভিনয় করতেন, সেই ছবিগুলিতে সই করতেন না করিনা। দিদি ‘লোলো’র সম্পর্ক ভাঙায় বচ্চন পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন করিনা। তাই অমিতাভ কিংবা অভিষেক, কারও সঙ্গেই কাজ করতে চাইতেন না বেবো৷
তাঁর এই সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হয়। অমিতাভের জন্য ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফেরান অভিনেত্রী৷ যদিও কানাঘুষো শোনা যায়, অমিতাভ সেই ছবিতে অভিনয় করছেন বলে পরিচালক নিজেই নাকি করিনাকে ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেন। তবে বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ‘ব্ল্যাক’ ছবির চিত্রনাট্য পছন্দ হয়নি করিনার। তাঁর মনে হয়েছিল, এই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়বে৷ তাই সঞ্জয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন৷ পরে ওই ছবিতে অভিনয় করে রানি মুখোপাধ্যায় এবং তা দারুণ হিট করে৷
পরে অভিষেক ও করিশ্মার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ‘হা ম্যায়নে ভি প্যার কিয়া’ ছবির প্রযোজক সুনীল দর্শন৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ওদের সম্পর্ক কারও অজানা ছিল না৷ কিন্তু ওদের জুটি আমার ভালো লাগত না৷’ তিনি আরও বলেন, ছবির সেটে অভিষেক এবং করিশ্মার প্রায়ই ঝগড়া হত। ওদের কখনও মিল হত না। সুনীল বলেন, ‘‘অভিষেক এবং করিশ্মা যে একে অপরের জন্য নয়, সেটা দেখেই বুঝেছিলাম। অভিষেক ভীষণ মিষ্টি একটা ছেলে। করিশ্মাও খুব ভাল মানুষ। কিন্তু জুটি হিসাবে ওরা ছিল বেমানান।’’
বলিপাড়ার অন্যতম পরিচালক-প্রযোজক আদিত্য চোপড়া এবং বাঙালি অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়ের প্রেম কাহিনীও কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর। পাঁচ বছরের প্রেমের পর ন’বছরের সংসার। আদিত্য এবং রানির প্রেমকাহিনি সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়ে কিছু কম নয়। এক সময় রানির সঙ্গে থাকবেন বলে ঘরও ছেড়েছিলেন আদিত্য!
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির সেটেই প্রথম আলাপ আদিত্য-রানির। নায়িকাকে এর আগে থেকে চিনলেও বরাবরই রানি তাঁকে এড়িয়ে যেতেন৷ ২০০১ সাল থেকে যশরাজ ব্যানারে কাজ করতে শুরু করেন রানি। ওই বছরই দীর্ঘদিনের প্রেমিকা পায়েল খান্নাকে বিয়ে করেন আদিত্য।
পায়েল ছিল স্কুলের বন্ধু৷ আদিত্যের বাবা যশ চোপড়া এবং মা পামেলা চোপড়া শুরু থেকেই পায়েলকে পুত্রবধূ হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয় তাঁদের৷ কিন্তুস সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ২০০৯ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের।
পায়েলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছু দিন পরেই শোনা যায়, রানির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন আদিত্য। খবর চাউর হতেই আদিত্যের বিচ্ছেদের জন্য রানিকে কঠগড়ায় তোলা হয়৷ রানির সঙ্গে ছেলে আদিত্যের মেলামেশাও পছন্দ করতেন না যশ এবং পামেলা। তবুও সব কিছু উপেক্ষা করেই পাঁচ বছর সম্পর্ক জিইয়ে রাখেন রানি এবং আদিত্য। রানিকে বিয়ে করার কথা বাড়িতে জানাতেই শুরু হয় অশান্তি।
যশ এবং পামেলা উভয়েই নাকি পুত্রবধূ হিসাবে রানিকে মেনে নিতে পারেননি। সে কথা আদিত্যকেও সাফ জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু রানিকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে তিনি মেনে নেবেন না বলে সাফ জানান আদিত্য।
পরিবার বিয়েতে অমত করায় বাড়ি ছেড়েও বেরিয়ে গিয়েছিলেন আদিত্য। বলিপাড়া সূত্রে খবর, টানা এক বছর নাকি হোটেলে কাটিয়েছিলেন আদিত্য। তবে ছেলের এই জীবন মেনে নিতে পারেননি মা পামেলা। আদিত্যকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। সেই সময় আদিত্য শর্ত রাখেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কোনও রকম সিদ্ধান্তে বাবা-মা হস্তক্ষেপ না করলে, তবেই বাড়ি ফিরবেন৷ আদিত্যের শর্তে মেনে নেন যশ এবং পামেলা।
এর পরেই চোপড়াদের বাড়িতে যাওয়া-আসা শুরু হয় রানির। অভিনেত্রী হিসাবে রানিকে বেশ পছন্দই ছিল যশ এবং পামেলা। পরে পুত্রবধূ হিসাবেও রানিকে মেনে নেন তাঁরা৷
পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৪ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন আদিত্য এবং রানি। ইটালিতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে সম্পন্নন হয় তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের এক বছর পরেই জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র কন্যাসন্তান আদিরার৷
আদিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রানি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও ভাবেই আদিত্যের ঘর ভাঙিনি। ওর বিচ্ছেদ হওয়ার অনেক পরে মেলামেশা শুরু করেছিলাম। তাছাড়া সেই সময় ও আমার প্রযোজকও ছিল না।’’