কলকাতা: শরীর স্থিতিশীল হলেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা। ফেলুদার স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ভাবাচ্ছে তাঁদের। অভিনেতাকে সুস্থ রাখতে স্টেরয়েড দিতে হচ্ছে। স্টেরয়েড বন্ধ করলেই সমস্যা শুরু হচ্ছে সৌমিত্রর। হাসপাতালের নিউরো মেডিক্যাল বোর্ডের বক্তব্য স্টেরয়েড দেওয়ার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার সাময়িক উন্নতি হয়েছিল। তাই আগামী দুদিন স্টেরয়েড দিয়ে অভিনেতাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে খবর।
এদিকে মঙ্গলবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এমআরআই করা হয়। সেখানে মারাত্মক কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। কিন্তু তাঁর গ্লাসগো কোমা স্কেল অনেকটাই নেমে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। সাধারণত এর মাত্রা ১৫ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সৌমিত্রর তা অনেকটাই কম। প্রায় ৯। এই সূচক যদি ৩-এ পৌঁছয় তবে রোগীর ব্রেন ডেথ হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেড়ে যায়। এনিয়ে তাই চিন্তায় চিকিৎসকরা। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ১৬ জনের টিম বর্তমানে অভিনেতার শরীর নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছিল। স্টেরয়েড ছাড়া তাঁর মস্তিষ্ক কতটা কাজ করছে তা পর্যবেক্ষণ করছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে স্টেরয়েড বন্ধ করলেই শুরু হচ্ছে সমস্যা।
অভিনেতাকে সুস্থ করে তুলতে মিউজিক থেরাপির সাহায্য নিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের বক্তব্য তাঁকে সুস্থ করতে তাঁর পছন্দের গানগুলো শোনানো হচ্ছে। এতে অভিনেতার মস্তিষ্কের আবেগের কেন্দ্র হাইপোথ্যালামাস অংশ সক্রিয় হবে৷ যা মানসিক শান্তি, স্বস্তি ও আনন্দ বাড়াতে সাহায্য করবে। এনআইবিপি মনিটরে এর ফলাফল ধরাও পড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আগে দৈনিক ১০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। এখন দিনে ৪ লিটার অক্সিজেন দিতে হয় তাঁকে। তাও যে সব সময় দিতে হয়, এমন নয়। অনেক সময় অক্সিজেনের ছাড়াই শ্বাস নিতে পারছেন তিনি। এছাড়া অভিনেতার কিডনি, যকৃৎ ও হার্ট-সহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ঠিকঠাক কাজ করছে। জ্বর নেই।
এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই অসুস্থ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জ্বর আসে তাঁর। হালকা করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় করোনা পরীক্ষা করা হয় তাঁর। সোমবার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। তখনই জানা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অভিনেতা। মঙ্গলবার বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের করোনা ধরা পড়ে। মিন্টো পার্ক এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বয়সের কারণে ও অন্যান্য অসুস্থতার কারণে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ১৬ জন চিকিৎসক তাঁকে দেখছেন। করোনার পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। স্নায়ুর সমস্যা শুরু হয়েছিল তাঁর। এছাড়া তাঁর ফুসফুসের অবস্থা নিয়েও চিন্তিত ছিলেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া ক্যানসারও এই ক্রমশ শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল মস্তিষ্কে এবং ফুসফুসে। তবে দ্বিতীয় প্লাজমা থেরাপির পর তিনি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হয়েছিলেন। আর বুধবার রাতে জানা যায় করোনা মুক্ত হয়েছেন তিনি।