“সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়”, সময়কে হারিয়ে ফেললেও কিছু জিনিস সবময়ই অনড় থেকে যায় প্রতিটা মানুষের মনের গভীরে এবং স্রোতের টানে মানুষ খুঁজে পায় এমন কিছু হীরেকে, যার চমক লেগে থাকে সারাজীবন। আজ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন।
২ মে ১৯২১ সালে এই কলকাতার বুকেই জন্ম নেন এই মানুষটি। ‘রে’ -এর ‘রে’-তে আজও এই চলচিত্র জগৎ লালিত। এবং শুধু যে চলচিত্র জগৎ তা নয়, মানুষ তাঁকে মনে রাখে প্রতিদিন, প্রতিটা মুহুর্তেই। আজও তাঁকে ছাড়া পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ কিন্তু আজও নিজেকে খুঁজে পায় অপুর পাঁচালির ছোট্ট অপুর মধ্যে।
তাঁরা আজও ভাবে যদি সত্যিই গুপি-বাঘার মতো ভূতের রাজার কাছ থেকে তিনটে বর পাওয়া যেত, যদি সত্যিই পাওয়া যেত এমন কোনো জুতো যার জাদু বলে যে কোনো যায়গায় ইচ্ছে হলেই চলে যাওয়া যেত। তাহলে কি ভালোই না হত! ওঁনার ঝুলিতে নেই এমন কোনো জিনিস খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই ভুলে গেলে চলবে না সবার প্রিয় গোয়েন্দা ফেলুদা ও তাঁর সঙ্গী ভাগনে তপসেকে। তাঁদের একের পর এক জটিল রহস্যের সমাধানের কথা পড়লে আজও যেন রোমাঞ্চ লাগে।
আবার কল্পবিজ্ঞানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে প্রফেসর শঙ্কুর কথা। যাঁর গল্প না পড়লে জানাই যেত না কোনোদিন, যে মানুষ চাইলেই তাঁর কল্পনার তরীকে বাইতে পারে যেকোনো দিকেই। আসলে প্রতিটা মানুষের মধ্যে একটা শিশু লুকিয়ে থাকে। যাকে খুঁজে পেয়েছিলেন এই মানুষটি। তাই তাঁর কল্পনা শক্তির উপর ভর করেই তিনি বানিয়েছিলেন এমন সব অসাধারণ মাস্টারপিস যা বাঙালী মনকে আজও চমৎকৃত করে তোলে। কিন্তু এই সত্যজিৎ রায় মানুষটি আসলে কে? শুধুমাত্র কি পরিচালক, না কি লেখক, না কি শিল্পী? সেই উত্তর খুঁজতে গেলে এক অতল গভীরে হারিয়ে যেতে হয়।
তবে তিনিই সেই মানুষটি যাঁকে চার্লি চ্যাপলিনের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৮৫ সালে তিনি পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি পান অস্কার এবং ভারতরত্নও। এবং সত্যজিৎ রায় হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি পেয়েছিলেন অস্কার। এবং সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাঁকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়।