নয়াদিল্লি: কাটফাটা রোদ, তীব্র গরম উপেক্ষা করেই ইংরেজি বিষয়ে পাশ করানোর দাবি জানিয়ে রাস্তায় বসেছেন উচ্চমাধ্যমিকের অনুত্তীর্ণ পড়ুয়ারা৷ হাতে প্ল্যাকার্ড৷ তাতে লেখা,‘‘আমাদের কেন ফেল করানো হল?’’ সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্লোগান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের দাবি, মানছি না, মানব না৷ কিন্তু এই প্রতিবাদের খবর করতে যাওয়া এক সাংবাদিক আচমকাই এক আন্দোলনরত ছাত্রীকে Umbrella বানানটি জিজ্ঞাসা করে বসেন৷ সেই বানান করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খায় সে৷ বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে বলে, amrela ৷ এর পর থেকে আমরেলা নিয়ে শুরু হয় শোরগোল৷ মিম-কটাক্ষের বন্যা৷ এমনকী অকথ্য গালিগালাজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় কান পাতা দায়৷ এই পরিস্থিতিতে আর চুপ থাকতে পারলেন না রায়তি ভট্টাচার্য৷
আরও পড়ুন- আগুন রঙা সুইমস্যুটে সমুদ্র সৈকতে উষ্ণতা ছড়ালেন লাস্যময়ী অনুষ্কা, দেখুন ছবি
বাবা ছিলেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক৷ পরিবারের ইচ্ছায় তাই ডাক্তারি পাশ করেন রায়তিও৷ ভালই ফল করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু মনের টানে ডাক্তারি ছেড়ে থিতু হন অভিনয়ে৷ ধারাবাহিকের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন বড় পর্দাতেও৷ সোমবার উচ্চমাধ্যমিকের কয়েকজন অকৃতকার্য ছাত্রীর প্রতি সমষ্টিগত হেনস্থা দেখে আর চুপ থাকতে পারলেন না তিনি৷ গলদ যে গোড়াতেই, সে কথাটাই চোখে আঙুল দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন অভিনেত্রী৷
রায়তি জানান, তিনি নিজেও সরকারি স্কুলের ছাত্রী ছিলেন৷ যেখানে ক্লাস ফাইভে পড়ানো হয় ‘এ ফর অ্যাপল’৷ আর ক্লাস ইলেভেনে সনেট৷ তাঁর কথায়, লোকে আমাকে ভুল বুঝতে পারে৷ কিন্তু আমি কোনও ধারনার পক্ষে কথা বলছি না৷ কথা বলতে চাই সিস্টেমের ফাঁক নিয়ে৷ ক্লাসে পাশ ফেল না থাকায় বিনা বাধায় ওরা এতদূর চলে এল৷ এর পর হঠাৎ ওদের ফেল করিয়ে দেওয়া হল৷ ওরা তো প্রতিবাদ করবেই৷ রায়তি জানান, তাঁর জন্য বাবা আলাদা করে ইংরেজির শিক্ষক রেখেছিলেন৷ তাই তাঁর কোনও অসুবিধা হয়নি৷ কিন্তু যাদের সামর্থ নেই তারা? আজ ‘আমরেলা’-কাণ্ডের ছবি জেলায় জেলায় এক৷ আসলে এরা সরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের মানই প্রতিফলিত করছেন৷
ফেসবুকে ক্ষোভ উগড়ে রায়তি লিখেছেন, ‘‘আমরেলা’ নিয়ে হাসাহাসির কিছু নেই। এটাই আমাদের দেশের প্রকৃত অবস্থা। কিছু দিন আগে যারা গর্বিত বাংলা মিডিয়াম ছিলেন, তাঁরাই মিম বানাচ্ছেন। মেয়েটি হয়তো আমব্রেলা বানান জানে না, কিন্তু ছাতা বানান জানে। বাঙালি হয়ে তো এই টুকুতেই সন্তুষ্ট থাকা যেত। ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে যেমন বাংলায় ফেল করলেও অসুবিধে হয় না। বাংলা মাধ্যমেও করাই যেত তেমন। কিন্তু সেটা করা যাবে না। আমাদের এই সিস্টেমে ইংরাজিটা জানা যে কত জরুরি, সেটা আমরা প্রতি পদে টের পাই, সে যতই আপনারা তর্কের খাতিরে যুক্তি সাজান। আর বাংলা মাধ্যমের সাধারণ স্কুলে পঠন-পাঠনের মান সম্পর্কে আমার বেশ ধারণা আছে।’
একইভাবে সিস্টেমের দিকে আঙুল তুলে গর্জে উঠেছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও৷ বাংলার শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিনেত্রী। তাঁর প্রশ্ন, “Umbrella কেন amrela হল সেটা ভাবুন।” আমরেলা –কাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়েও যে কর পড়ুয়া সামান্য বানানটুকু জানে না, তাঁরা কীভাবে পূর্ববর্তী ক্লাসগুলোতে উত্তীর্ণ হল? স্কুলের পঠনপাঠন-ই বা এযাবৎকাল কেমন ছিল? উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করা পড়ুয়াদের এই বিক্ষোভ ভাবিয়ে তুলেছে জনগণকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শ্রীলেখার মন্তব্যকে অনেকে সমর্থনও জানিয়েছেন৷
শুধু আমরেলা কাণ্ডই নয়৷ স্কুলে গরমের ছুটি বাড়ানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শ্রীলেখা৷ খোঁচা দিয়ে তিনি বলেছেন, “ওদিকে গরমের ছুটি আবারও বাড়ল.. আচ্ছা উপভোগ করো।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>