কী এমন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে পল্লবীর জীবনের শেষ ৭২ ঘণ্টায়? ধন্দে পুলিশ

কী এমন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে পল্লবীর জীবনের শেষ ৭২ ঘণ্টায়? ধন্দে পুলিশ

কলকাতা: দেখতে দেখতে সপ্তাহ পাড় করল টলিপাড়ার উঠতি অভিনেত্রী পল্লবী দের আত্মহত্যার ঘটনা। ইতিমধ্যেই অভিনেত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে একাধিক রহস্য। এই ঘটনা আদৌ আত্মহত্যা কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে বারবার। পল্লবীর পরিবারের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে পল্লবীর প্রেমিক তথা লিভিং পার্টনার সাগ্নিককেও। তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা ম্যারাথন জেরা করে খোঁজা হচ্ছে পল্লবীর মৃত্যুর আসল কারণ। কিন্তু এই এক সপ্তাহে পল্লবী এবং সাগ্নিক সম্পর্কিত একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এলেও পল্লবীর মৃত্যুর কিংবা আত্মহত্যার আসল কারণ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট উত্তর পায়নি পুলিশ। জানা যাচ্ছে মৃত্যুর দু-তিন দিন আগে থেকেই ঘণীভূত হয়েছিল রহস্য। আর সেই রহস্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পল্লবীর মৃত্যুর আসল কারণ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত্যুর আগের দুদিন নাকি পল্লবী কিংবা সাগ্নিক কেউই তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে বাইরে বের হননি। শেষ ৭২ ঘন্টা তাঁরা একসঙ্গে ফ্লাটের মধ্যেই ছিলেন। তিনদিনের মাথায় গত রবিবার সকালে যখন সামান্য কিছুক্ষণের জন্য সাগ্নিক বাড়ির বাইরে বের হন তখনই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন পল্লবী। অন্তত পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছেন সাগ্নিক। কিন্তু পুলিশ খুঁজছে শেষ ৭২ ঘন্টা একসঙ্গে ফ্ল্যাটে থেকে ঠিক কি কি করেছিল পল্লবী ও সাগ্নিক, তার উত্তর। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের মত, শেষ ৭২ ঘন্টায় ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকাকালীন দুজনের মধ্যে গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। আর তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পল্লবী মৃত্যুর কারণ।

পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, গত ১২ মে শেষ শুটিংয়ের কাজে বাইরে গিয়েছিলেন পল্লবী। এরপর থেকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। এর সঙ্গেই খবর, গত ১৩ এবং ১৪ মে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার পল্লবী একাধিক পরিচালক এবং টিভি সিরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের ফোন করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কোনও চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করেন। এক কথায় কাজ খুঁজছিলেন পল্লবী। কয়েকজন কাজের সুযোগ রয়েছে বলেও আশ্বাস দেন বলে জানা গিয়েছে। তাহলে কি কাজ না পেয়েই অবসাদে আত্মহত্যা? উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

উল্লেখ্য এই প্রসঙ্গে পল্লবীর প্রেমিক সাগ্নিক আগেই জানিয়েছিলেন, পল্লবীর হাতে আর বিশেষ কোনও কাজ ছিল না। সম্প্রতি যে সিরিয়ালে তিনি লিড রোলে কাজ করছিলেন সেই সিরিয়াল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্তায় সিরিয়াল শেষ হয়ে গেলে কি হবে এবং আদৌ তিনি কোনও কাজ পাবেন কিনা সেই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন অভিনেত্রী। অন্যদিকে হাতের কাজ না থাকলেও নিজেদের বিলাসবহুল জীবন এবং মোটা টাকার দামি দামি গয়না, বাড়ি-গাড়ির খরচে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছিল অভিনেত্রীর। ইতিমধ্যেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে সাগ্নিকের উপার্জন সামান্যই ছিল। তাঁর এবং পল্লবীর বিলাসবহুল জীবনের খরচের সিংহভাগই পল্লবীকেই টানতে হত। আর তা করতে গিয়েই পল্লবীর হাতের টাকা ক্রমশ ফুরিয়ে আসছিল।

এদিকে আবার সাগ্নিককে একটানা জেরার পর পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে যে, সল্টলেক একটি ভুয়ো কলসেন্টার কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে সল্টলেক এবং রাজারহাটে কলকাতা পুলিশ, সিআইডি এবং বিধাননগর কমিশনারেটএর পুলিশ ক্রমাগত অভিযান চালিয়ে একের পর এক ভুয়া কল সেন্টার বন্ধ করে। বেগতিক দেখে আগেভাগেই সাগ্নিক তাঁর নিজের কলসেন্টারটি বন্ধ করে দেন। ফলে তিনিও কদিন বাড়িতেই ছিলেন। শেষের দিকে বাড়িতে থাকাকালিন পল্লবী এবং সাগ্নিকের মধ্যে বড় কোনও অশান্তি হয়েছিল কিনা এবং তার জেরেই এই আত্মহত্যা কিনা আপাতত সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টাতেই দিনরাত জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − one =