নয়াদিল্লি: প্রয়াত কত্থকের ‘মহারাজা’৷ রবিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর৷ সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন এক নিকট আত্মীয়। একাধারে নাচ, তবলা এবং কণ্ঠসঙ্গীত, তিন ক্ষেত্রে সমান পারদর্শী ছিলেন বিরজু মহারাজ। ছবিও আঁকতেন দক্ষতার সঙ্গে। রবিশঙ্কর তাঁর নাচ দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি লয়ের পুতুল’!
আরও পড়ুন- নীল জলে শরীর ডুবিয়ে জলকেলিতে মত্ত কিয়ারা, শরীরি হিল্লোলে ঝড় নেটপাড়ায়
রবিবার রাতে দিল্লির বাড়িতে নাতির সঙ্গে খেলছিলেন তিনি৷ সেই সময় অকস্মাৎ অসুস্থ বোধ করেন৷ তড়িঘড়ি দিল্লির সকেত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে৷ সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর৷ বেশ কিছুদিন ধরে কিডনির সমস্যাতেও ভুগছিলেন তিনি৷ চলছিল ডায়ালিসিস৷
বিরজু মহারাজের জন্ম ১৯৩৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি৷ কত্থকের ‘মহারাজা’ পরিবারে বেড়ে ওঠা৷ তাঁর দুই কাকা শম্ভু মহারাজ এবং লচ্ছু মহারাজ ছিলেন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী। ছোট থেকেই তাঁরা ছিলেন বিরজুর অনুপ্রেরণা৷ তবে বিরজু মহারাজের বাবা অচ্চন মহারাজের কাছেই নাচের তালিম শুরু তাঁর৷ শিশু শিল্পী হিসাবে বাবার সঙ্গে বহু বার মঞ্চ ভাগ করেছিলেন তিনি৷ কৈশোর বসয়েই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল ‘গুরু’ তকমা৷ ১৯৮৩ সালে পদ্ম বিভূষণ সম্মান পান বিরজু মহারাজ৷
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একাধিক ধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিরজু মহারাজ৷ পাশাপাশি বেশ কিছু ছবিতে কোরিওগ্রাফার হিসাবেও কাজ করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’৷ ওই ছবিতে দুটো গানের কোরিওগ্রাফি করেন মহারাজ। হালফিলের জমানায় ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মস্তানি’-র মতো ছবিতে সকলের মন ছুঁয়েছিলেন বিরজু মহারাজের কোরিওগ্রাফি৷ ‘বিশ্বরূপম’ ছবিতে কোরিওগ্রাফির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি৷
কলকাতার সঙ্গেও নিবিড় যোগ ছিল বিরজু মহারাজের। ১৯৫২ সালে মন্মথ নাথ ঘোষের বাড়িতে বসেছিল আসর৷ প্রথমবার সেখানে পারফর্ম করেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র চোদ্দ। প্রয়াত হয়েছেন তাঁর বাবা৷ জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। সে সময় ডাক পান কলকাতা থেকে। কাকা লচ্ছু মহারাজ সেই সময় মায়ানগরীর বিনোদন জগতে কোরিওগ্রাফির কাজে ব্যস্ত৷ আর এক কাকা শম্ভু মহারাজ লখনউতেই নিজের কোনও কাজে ব্যস্ত ছিলেন৷ বাধ্য হয়েই এক পাতানো ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতায় তাঁকে পাঠিয়েছিলেন মা।
বাবাকে হারালেও কাকাদের কাছে নাচের শিক্ষা চলেছে। ধীরে ধীরে নিজেকে গড়েছেন৷ দেশ-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন। প্রচুর ছাত্রছাত্রীও রয়েছে তাঁর। তিনি নৃত্যশিল্পকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁর মৃত্যুতে শিল্পজগতে নক্ষত্র পতন ঘটল৷