Aajbikel

এক বছর অতিক্রান্ত, সম্রাজ্ঞী হীন সুরের জগত, মৃত্যু বার্ষিকীতে লতার কিছু অজানা কথা

 | 
lata

কলকাতা: দেখতে দেখতে একটা বছর অতিক্রান্ত৷ ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, ইহলোক ত্যাগ করে চিরবিদায় নিয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর৷ সমাপ্ত হয়েছিল এক সুরেলা অধ্যায়ের৷ তিনি আজ নেই৷ কিন্তু রয়ে গিয়েছে তাঁর ‘আওয়াজ’৷ তাঁর সুরের মায়ায় আচ্ছাদিত সঙ্গীত দুনিয়া৷ 
২০২৩-এ দাঁড়িয়ে আরও একবার তাঁকে স্মরণ করল সঙ্গীত দুনিয়া৷ অন্যদিকে, বালুকাবেলায় বালি নিয়ে সুর সম্রাজ্ঞীকে শ্রদ্ধা জানালেন ওড়িশার আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বালুকা শিল্পী সুদর্শন পট্টনায়ক৷ বিভিন্ন উৎসব থেকে শুরু করে ইভেন্ট বা বিশিষ্টদের জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন, বালি দিয়ে মূর্তি গড়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেন তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না৷ পুরীর সমুদ্র সৈকতে লতাকে স্মরণ করে ৬ ফুট উঁচু বালির ভাস্কর্য তৈরি করলেন তিনি৷ স্যান্ড আর্টে লিখলেন 'মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায়'। 

আরও পড়ুন- সিড-কিয়ারার বিয়েতে হবে এলাহি ভূরিভোজ! জানেন কত রকম পদ থাকছে মেনুতে?

সত্যিই তাই৷ প্রেমের গান থেকে শুরু করে দেশাত্মবোধক, আইনটেম সং, সবেতেই তিনি ছিলেন সাবলীল৷ তাঁর সুরেলা কণ্ঠে মোহিত হয়েছিল আপমর দুনিয়া৷ তাঁর গান শুনে আবেগ প্রবণ হননি, এমন মানুষ হাতে গোনা৷ লতার গান শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও৷ গানটি ছিল, 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ'। সুরকার কবি প্রদীপ লতাকে দিয়ে এই গান গাইয়েছিলেন বিনা কোনও রিহারস্যালে। 


প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল সুর সম্রাজ্ঞীর৷ প্রয়াত অভিনেতী দিলীপ কুমারের সঙ্গে ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল তাঁর৷ একের পর এক হিট গান, বিপুল খ্যাতি, অগণিত ভক্ত তাঁকে সুর সম্রাজ্ঞী করে তুললেও, ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট ছিল তাঁর৷ একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই আমার কাছে জানতে চান আমি পরের জন্মে কী হতে চাই৷ আমি বলব জন্ম যদি না হয়, তাহলেই ভালো৷ আর যদি নতুন জন্ম হয়ও, তাহলে আমি লতা মঙ্গেশকর হতে চাই না৷ কারণ লতা মঙ্গেশকরের জীবনে যে যন্ত্রণা রয়েছে, তা শুধু সেই জানে৷’’ তবে নিজের ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা কোনও দিনই প্রকাশ্যে আননেনি তিনি৷ 

তবে শোনা যায়, লতা মঙ্গেশকরের জীবন প্রেম এসেছিল৷ তাও একেবারে নিখাদ ও গভীর ভালোবাসা৷ কিন্তু যাঁর সঙ্গে একদা তাঁর নাম জুড়েছিল তিনি লতাকে বিয়ে করতে পারেননি৷ তাই আজীবন অবিবাহিতই থেকে যান তিনি৷ বিয়ে করেননি লতাও৷ সেই ব্যক্তি হলেন বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাজ সিং দুঙ্গারপুর ৷ তিনি ছিলেন রাজস্থানের রাজ পরিবারের সদস্য৷


১৯২৯ সালে মহারাষ্ট্রে জন্ম লতা মঙ্গেশকরের। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের কাছে সঙ্গীতের হাতেখড়ি তাঁর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ 'কোকিলকণ্ঠীর'। ১৯৪৫ সালে যখন প্রথম মুম্বই আসেন তখন তাঁর 'পথ প্রদর্শক' ছিলেন গুলাম হায়দার। লতার গানের গলা শুনে তিনি মুগ্ধ হলেও তা পছন্দ হয়নি তৎকালীন বিখ্যাত বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের। তিনি মনে করেছিলেন যে লতার গলা বড্ড সরু। কিন্তু গুলাম হায়দার লতার ওপর ভরসা হারাননি। তিনি জানতেন যে একদিন সবাই লতার পায়ে পড়বে শুধু তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ানোর জন্য। পরবর্তীকালে তেমনটাই ঘটল। হায়দারের ‘মজবুর’ ছবিতে ১৯৪৮ সালে গান রেকর্ড করেন লতা। তবে সমালোচনা থামেনি। স্বয়ং দিলীপ কুমার লতার উর্দু উচ্চারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে অবশ্য দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে ভুল শুধরে নিয়েছিলেন লতা। এরপর যখন ১৯৪৯ সালে এল 'আয়েগা আনেওয়ালা', সেই গান সুপারহিট। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কোকিলকন্ঠীকে। হিন্দি সহ পঁয়ত্রিশটা ভাষায় অন্তত হাজার খানেক গান রেকর্ড করেছেন লতা৷ সম্মানিত হন ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে ও একাধিক জাতীয় পুরস্কারে৷ 


লতা কাজ করেছেন শচীন দেববর্মণ, খৈয়াম, নৌসদ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণজি-আনন্দজির মতো স্বনামধন্য সঙ্গীক পরিচালকদের সঙ্গে৷ এক সময় তাঁর কণ্ঠ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়েছিল, তাঁর ভোকাল কর্ডে কিন্তু 'কারিকুরি' করা আছে। তবে সেইসব কখনও ধোপে টেকেনি। আসলে এমন গলার জাদুতে মাত করেছিলেন লতা যে কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমনও কেউ গাইতে পারে। এত সাবলীল, অথচ এত নিখুঁত। 


অনেকেই হয়তো জানেন না লতা মঙ্গেশকরই প্রথম ভারতীয় শিল্পী যিনি ১৯৭৪ সালে ওয়েন অর্কেস্ট্রার সঙ্গে লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে পারফর্ম করেছিলেন৷ গানের পাশাপাশি ফটোগ্রাফির শখও ছিল লতার৷ একটি রোলিফ্লেক্স ক্যামেরা দিয়ে হাত সেট করার সময় থেকেই তাঁর নেশা চেপে বসে৷ দেশে সে ভাবে সুযোগ না হলেও, বিদেশে গেলে ক্যামেরা হাতে ঘুরতেন শিল্পী৷ 


পাশ্চাত্য সঙ্গীতের কদর ছিল তাঁর কাছে৷ মোজার্ট, বিথোভেন, চোপিন, ন্যাট কিং কোল, দ্যা বিটলস, বারব্রা স্ট্রিস্যান্ড এবং হ্যারি বেলাফন্টের গান নিয়মিত শুনতেন তিনি৷ একই ভাবে ছিলেন হলিউড ছবির ভক্ত৷ টেনশন হলেই টিভির সামনে বসে ক্রিকেট দেখতে বসে পড়তেন সুর সম্রাজ্ঞী৷  ক্রিকেট দেখতে খুবই পছন্দ করতেন তিনি৷ 


 

Around The Web

Trending News

You May like