মুম্বই: জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে সুকেশ চন্দ্রশেখরের ‘প্রেমের সম্পর্ক’ নিয়ে তোলপাড় নেট দুনিয়া। শোরগোল পড়েছে বিটাইনেও৷ সুকেশ নাকি নোরা ফতেহির সঙ্গেও জোর করে সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন। বলিউডের এই দুই অভিনেত্রীকে দামি উপহারে ভরিয়ে দিয়েছিলেন ২০০ কোটি টাকা তোলাবাজিতে অভিযুক্ত সুকেশ৷ তবে শুধু জ্যাকলিন আর নোরাই নন৷ তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন, আরও চার মডেল-অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুকেশের৷ তাঁরা হলেন – নিকিতা তম্বোলী, চাহত খান্না, সোফিয়া সিং এবং আরুষা পাটিল৷ তাঁদেরও লক্ষ লক্ষ টাকার উপহার দিয়েছিলেন প্রতারক সুকেশ। এমনকি, সুকেশ গ্রেফতার হওয়ার পর এই চার মডেলই তিহাড় জেলে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
পুলিশের খাতায় সুকেশ ১০টি অপরাধে অভিযুক্ত। তবে ২০০ কোটির কেলেঙ্কারির অভিযোগে আপাতত তাঁর ঠিকানা তিহাড়। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে জ্যাকলিন এবং নোরাকে৷ এ বার তদন্তকারীদের নজরে ওই চার মডেল-অভিনেত্রী। জানা গিয়েছে, সুকেশের সহকারী পিঙ্কি ইরানির মাধ্যমেই তিহাড়ে পৌঁছেছিলেন তাঁরা৷
ইডি তাদের চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, তিহাড় জেলে দেখা করতে যাওয়ার বিনিময়ে গুচি, এলভি, ভারসাচের মতো নামী বিদেশি ব্র্যান্ডের বহুমূল্য উপহার পেয়েছিলেন তাঁরা। পিঙ্কির ব্যাঙ্কেও জনা পড়েছিল মোটা অঙ্কের টাকা৷ সুকেশের সঙ্গে ‘সম্পর্কের’ জেরেই এবার ইডির নজরে নিকিতা।
২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর নিকিতার বয়ান রেকর্ড করে ইডি। নিকিতার দাবি, ২০১৮ সাল নাগাদ পিঙ্কিই প্রথম হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই সময় পিঙ্কি নিজেকে ‘অ্যাঞ্জেল’ নামে পরিচয় দেন৷ জানিয়েছিলেন তিনি একজন প্রযোজক তথা কোঅর্ডিনেটর৷ সুকেশের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য পিঙ্কিই নিকিতাকে মুম্বই থেকে দিল্লিগামী বিমানের টিকিট পাঠান৷ ইডির দাবি, ওই টিকিটেই দিল্লিতে আসেন মডেল অভিনেত্রী৷ একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে চেপে পৌঁছন তিহাড় জেলে৷ এর পর জেল চত্বরে দাঁড়ানো একটি ইনোভা গাড়িতে বসে জেলের ভিতরে ঢোকেন তিনি। ওই দিন নিকিতার সঙ্গে পিঙ্কিও ছিলেন বলে দাবি। প্রথমে তাঁকে জানানো হয়নি এটা জেল৷ পরে জানতে পারেন৷
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ওই দিন তিহাড়ে কোনও রকম সিকিউইরিটি চেক ছাড়াই ভিতরে ঢুকেছিলেন তাঁরা৷ দেখতে চাওয়া হয়নি তাঁদের পরিচয়পত্র৷ সেখানে পিঙ্কি সুকেশকে ‘শেখর’ বলে নিকিতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷ সুকেশকে বড় মাপের প্রযোজক বলেও উল্লেখ করেন পিঙ্কি৷ তাঁদের দ্বিতীয় সাক্ষাতও হয়েছিল তিহাড়েই৷ সে সময় নিকিতাতে তিহাড়ের দোতলায় নিয়ে যান সুকেশ৷ সেখানে এলভি, গুচির মতো নানা নামীদামি ব্র্যান্ডের ব্যাগ রাখা ছিল। সেখান থেকে একটি করে ব্যাগও নিকিতাকে উপহার দেন সুকেশ। সঙ্গে দেন নগদ দু’লক্ষ টাকা।
নিকিতার মতোই সুকেশের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে ‘বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়’ খ্যাত অভিনেত্রী চাহত খান্নার। তিনি ইডিকে জানান, দক্ষিণ ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হিসাবে সুকেশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পিঙ্কি। সুকেশের পরিচিয় দিয়েছিলেন ‘শেখর রেড্ডি’ নামে৷ ২০১৮ সালেই তিহাড়ের অন্দরে সুকেশের ‘সাজানো অফিসে’ তাঁর সঙ্গে দেখা হয় চাহতের। সে সময় পিঙ্কি একটি নীল রঙের ভারসাচে ব্যাগ-সহ দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রীকে। চাহতও পিঙ্কির পাঠানো বিমানরে টিকিটে দিল্লিতে এসেছিলেন৷ তার পর তিহাড়ে পৌঁছন বিএমডব্লিউ চেপে৷
তিহাড়ে সুকেশের অফিসে বড়সড় টিভি, প্লে-স্টেশন, সোফা, ফ্রিজ, ফোন থেকে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ছিল বলেই দাবি করেছে ইডি। ওই অফিসেই রাখা থাকত গুচি, এলভির মতো নানা ব্র্যান্ডে ব্যাগ, রোলেক্সের মতো ঘড়ি৷
নিকিতা এবং চাহতের মতো সোফিয়াকেও একই ভাবে বহুমূল্য উপহারে ভরিয়েছিলেন সুকেশ৷ গুটি কয়েক সিনেমায় অভিনয় করা সোফিয়ার সঙ্গেও সুকেশের দেখা করিয়েছিলেন সেই পিঙ্কি৷ ২০১৮ সালের মে মাসে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় সোফিয়া একাই সুকেশের সঙ্গে দেখা করতে যান৷ তখন তাঁকে দেড় লক্ষ টাকার একটি এলভি ব্যাগ দেন সুকেশ।
চার নম্বরে উঠে এসেছে আরুষার নাম৷ তাঁকেও একই ভাবে টাকা দিয়েছিলেন এই প্রতারক। তবে আরুষার দাবি, সুকেশের সঙ্গে কথা হলেও সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি তাঁর। তবে সুকেশের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ৫.২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। ইডি এই চার্জশিট দেওয়ার পরই এই চার মডেল অভিনেত্রী চলে এসেছেন দিল্লি পুলিশের আতস কাঁচে৷ জ্যাকলিন এবং নোরার মতো তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমের দাবি।