Dil Bechara Movie Review: সুশান্ত ছবির ‘দিল’, কিন্তু ছবিটি আদতে ‘বেচারা’

Dil Bechara Movie Review: সুশান্ত ছবির ‘দিল’, কিন্তু ছবিটি আদতে ‘বেচারা’

সিদ্ধার্থ বোস: সুশান্ত সিং রাজপুত যে একজন অসামান্য অভিনেতা ছিলেন, সে কথা আরও একবার প্রমাণ হল। সুশান্তের জীবনের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা-তেও একই রকম সাবলীল তিনি৷ এ ছবি শুধুমাত্র সুশান্তেরই হয়ে রইল৷

আরও পড়ুন- করোনার প্রভাব 'অবতার'-এর দুনিয়াতেও, পিছল ছবির মুক্তির দিন

ছবি শুরুর আগে সেই হাসি মুখের মানুষটাকে একটা সাদাকালো ফ্রেমে গিটার বাজাতে দেখা যায়, যা ছবি শুরুর আগেই মন ভারাক্রান্ত করে দেয়। মনে হয় যা ঘটেছে, তা না ঘটলেই পারত। এই ছবিতে সুশান্তের এন্ট্রি হয় একটা নাচের মধ্যে দিয়ে। বাইকের লুকিং গ্লাসে প্রথম শুভদৃষ্টি হয় কিজি বসু এবং ইমানুয়েল রাজকুমার জুনিয়রের। এই দৃশ্য যদিও দর্শককে হাসাবার জন্যই তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এই দৃশ্য দেখেই চোখে জল আসবে সুশান্তের অনুরাগীদের৷ ছবিতে সুশান্ত তথা ইমানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র ক্যানসার আক্রান্ত ও একটি পা হারানো উন্মাদ প্রেমিক, যে শুধুই ভালবাসতে জানে৷ ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে জানে। এই ছবির পরতে পরতে রয়েছে সুশান্তের অভিনয় দক্ষতার ছাপ৷ প্রতিটি চরিত্রের মতো ইমানুয়েল চিরিত্রটিকেও সহজ ও সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি৷ ইমানুয়েলকে গেঁথে নিয়েছেন নিজের মধ্যে। আমরা যে সত্যিই একজন অসামান্য শিল্পীকে হারিয়েছি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তাঁর চলে যাওয়ায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্যিই পূরণ হওয়ার নয়।

এবার আসি, ছবির প্রসঙ্গে। ‘দিল বেচারা’ জন গ্রিন-এর লেখা একটা উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে। এই গল্প নিয়ে হলিউডে ইতিমধ্যেই একটি ছবি হয়েছে, যার নাম, ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’। পরিচালক মুকেশ ছবি মুক্তির আগেই জানিয়েছিলেন, ‘দিল বেচারা’ ওই ছবির রিমেক। সত্যিই রিমেক, বলিউডি ধাঁচে গড়া রিমেক। ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’ এর  প্লট বাইরের পশ্চিমি সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে, সেখানে ভারতে তার রিমেক করতে গেলে, গল্পকে ভারতীয়করণের চেষ্টা করা হবে, এটা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যদি গল্পের সঙ্গে জড়িত চিন্তাভাবনাকেই  বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে গল্প দানা বাঁধতে পারে না। ‘দ্য ফল্ট ইন আওর স্টারস’এর গল্প গভীর জীবনবোধের। দু’জন ক্যানসার আক্রান্তদের ভালোবাসার গল্প। একজন সেরে উঠলেও আরেক জন হারিয়ে যায় আকাশের তারার মাঝে। ‘দিল বেচারাতেও একই দৃষ্টিকোণ রাখা হয়েছে। কিন্তু, এই ছবির স্ক্রিনপ্লেতে অহেতুক তাড়াহুড়ো চোখে পড়ে। ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের ‘দিল বেচারা’ছবিতে গভীর জীবনবোধকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও, তা কোনও ভাবেই দানা বাঁধতে পারেনি। প্রত্যেকবারই মনে হবে কিছু একটা যেন বাকি থেকে গেল। কিজি ও ম্যানির আলাদা জীবনদর্শন কখনই প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি পরিচালক। ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর একটা জায়গায় দু’জন কেন্দ্রীয় চরিত্রের ভালোবাসায় মিলিত হওয়ার একটা সিকোয়েন্স আছে৷ যা ছবির গল্পকে বুনতে সাহায্য করে৷ যেটা থাকা খুবই বাঞ্ছনীয়। নেটিজেনদের কথায় হয়তো ভারতের ছবিতে ওই ধরনের দৃশ্য না দেখানোই উচিত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই গল্পের জন্য দু’জন মানুষের ওই মিলন শুধু শারীরিক নয়, মানসিক।

আরও পড়ুন- পাটনার বাড়িতে ফিরল সুশন্তের পোষ্য, ছবি পোস্ট করলেন দিদি শ্বেতা

‘দিল বেচারা’ ওটিটি প্লাটফর্মেই মুক্তি পেয়েছে, ইদানিং এখানে যে ধরনের ওয়েব সিরিজ হচ্ছে , সেখানে অহেতুক সেক্স- এর দৃশ্য থাকে। কিন্তু ‘দিল বেচারা’ যেখানে সেটা ‘অহেতুক’ তকমার যোগ্য নয়, হয়ত ডিজনি সেখানে নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতেই সেটা বাদ দিয়েছে। বাদ দিয়েছে, সেটা চোখে পড়েছে। প্যারিসের হোটেলে, গানের দৃশ্যেই সেটা আসে এবং হঠাৎ করেই চলে যায়। অন্যদিকে, পরিচালক এর অযথা তাড়াহুড়ো গোটা গল্পটাকে ছুঁয়ে গেছে। ভালবাসতে যেটুকু সময় প্রয়োজন তাও দেওয়া হয় কিজি ও ম্যানিকে। অন্যদিকে, ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’- এর গল্পে মূল দুই চরিত্র এবং কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের বাবা ও মা এই চারজনের অন্যরকম জীবন চিন্তার মধ্যে দিয়ে এগোয়।

‘দিল বেচারা’ ছবিতে কিজি’র বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত ও স্বস্তিকা। দু’জনেই অভিনয়ের দিক থেকে অবদান রেখেছেন। কিন্তু গল্প অনুযায়ী তাদের চরিত্রের বিন্যাস করতে পরিচালক ব্যর্থ হয়েছেন। দুটো আলাদা দৃষ্টিকোণ রচনা কোনও ভাবেই স্থান পায়নি ‘দিল বেচারা’র স্ক্রিপ্টে। এমনকি, স্বস্তিকার চরিত্রের অদ্ভুত বদল যে কেন হল তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়না। যদি ওই চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরা হত, তাহলে প্যারিসে গিয়ে তাঁর যে পরিবর্তন, সেটা অনেক বেশি কার্যকর হত বলে মনে হয়। ছবিতে কিজির বাবা হিসাবে শাশ্বত তাঁর চরিত্রকে অনবদ্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ছবিতে একটি ক্যামিও চরিত্রে আসেন সাইফ আলি খান। তাঁর চরিত্রে তিনি ঠিকঠাক, কিন্তু সেই দৃশ্যকেও মুকেশ চটজলদি করতে চেয়েছেন। প্যারিসের একটা রেস্তোরাঁয়, যখনই এই দৃশ্যের শুট হয় তখনই ‘সময়’ একটা বিষয় হয়ে ওঠে। মনে হল যেন শুট তাড়াতাড়ি করে করতে বলেছেন ওই রেস্তোরাঁর মালিক।

আরও পড়ুন 'মাইলস টু গো…', রবার্টের কবিতায় অনুপ্রেরণা জোগালেন ক্যানসার-জয়ী মনীষা

যেখানে, ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর শেষ কুড়ি মিনিট ছবির ভাবনকেই পাল্টে দেবে৷ দর্শক মনে প্রভাব বিস্তার করবে, সেখানে ‘দিল বেচারা’-র শেষ মুহূর্ত যথেষ্ট ‘খারাপ’ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। চার্চে সঞ্জনার দেওয়া ভাষণ কোনও ভাবেই পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি এবং ছবির শেষে ম্যানির লেখা চিঠির বক্তব্যও সেই ভাবনার বিশ্লেষণ করতে পারে না। ছবির কারিগরি দিক বিচার করলে পোস্ট প্রোডাকশন এডিটিং এর কাজ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছে। যদিও এই ছবির ডাবিং এর সময় সুশান্তকে না পাওয়ার জন্যই হয়ত তাঁর কিছু কথা অরিজিনাল ফুটেজ থেকে নেওয়া, তাই কিছু কিছু কথা বুঝতে অসুবিধা হয়। সিনেমাটোগ্রাফি আরও ভালো হতে পারত, বিশেষ করে কিজির ক্যানসারের যন্ত্রণার দৃশ্যে। সিনেমার গানগুলিকে আলাদা ভাবে ভাল নাও লাগতে পারে, কিন্তু ছবির সঙ্গে এই গানগুলি যথার্থ ভাবেই মিলেছে, এর জন্য এআর রহমানের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।

সব শেষে তবুও এটি চূড়ান্ত মানবিক ছবি। ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’ না দেখে থাকলে এই ছবি ভালো লাগতেও পারে অনেকের। ভালোলাগার কারণ অবশ্যই সুশান্ত সিং রাজপুত। সঞ্জনার প্রথম মুখ্য চরিত্র হিসাবে তিনি তাঁর যথাসাধ্য দিয়েছেন। ছবির শেষে সুশান্ত’কে উদ্দেশ্য করে একটা ছোট কোলাজের উপস্থাপনা আছে,যা আবারও কাঁদিয়ে তোলে দর্শক’কে। ডিজনি প্লাস হটস্টারে এই ছবি দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *