কলকাতা: দাদাগিরির মঞ্চে ভূত! যারা ওই বিশেষ পর্বটি দেখেছেন তারাই একমাত্র বুঝবেন৷ আর যারা সেদিন কোনোভাবে এই পর্বটি মিস্ করে গেছেন, তাদের তো আফসোসের অন্ত নেই৷ ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ টেলিভিশনের পর্দার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো দাদাগিরির মঞ্চে? তাও আবার রীতিমত বৈজ্ঞানিক অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বোঝানো হয়েছে? এমন অভিজ্ঞতা বিরল বলাই যায়৷ রীতিমত পেশাদারীত্বের সঙ্গে পুরো ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করা৷ আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে যিনি এই পুরো ঘটনা সাক্ষ্য প্রমাণ সহ দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি হলেন দাদাগিরির এক প্রতিযোগিনী তথা ভূত বিশেষজ্ঞ৷
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কিভাবে এই ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে তার সুন্দর ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণও করেছেন৷ ভূতবাদীদের ধারণাকে আরও বেশী যুক্তিগ্রাহ্য ওয়মজবুত করেছেন৷ অলৌকিক কল্পনা আর কুসংস্কারের ভিতকে আরও মজবুত করেছেন৷ আর এতেই বেজায় চটেছেন বিজ্ঞান মনস্ক কিছু মানুষ ও সংগঠন৷ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ ও ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ এই ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ সমালোচনার সঙ্গে নাম জুড়ে গেছে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সৌরভ গাঙ্গুলিরও৷
একবিংশ শতাব্দীতে এই ধরণের অলৌকিক অবিজ্ঞান সম্মত ঘটনা টেলিভিশনে সম্প্রচারকে আইনত অপরাধ বলে উল্লেখ করেছে ‘ব্রেকথ্রু’৷ এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি, চ্যানেল কতৃপক্ষ এমনকি অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৫১(ক)ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ওই সংগঠন৷ পাশাপাশি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তদের নিরপেক্ষ বিজ্ঞানি, বিজ্ঞান সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সামনে উল্লিখিত জায়গায় ভূতের উপস্থিতি প৷র্যাম করে দেখানোর জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ‘ব্রেকথ্রু’৷ ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্করা সর্বদাই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৷ তবে তারা যেমন প্রশ্ন তুলেছেন ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে৷ পাল্টা প্রশ্ন ভূতবাদীদেরও, ভূত যে নেই তার প্রমাণ কোথায়?
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ব্রায়ান কক্সের মতে অজানা কোনো শক্তির উপস্থিতি থাকলে তাও আর কিছু না হোক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সার্ন এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এ ধরা পড়ত৷লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার হল বিশ্বের বৃহত্তম আণবিক বিশ্লেষক৷ চৌম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই যন্ত্র মহাজগতের মৌলিক বস্তুসমূহকে বিশ্লেষণ করে৷ এর মাধ্যমে আমাদের চারপাশে দৃশ্যমাণ জগতের প্রতিটি এলিমেন্টকেই জানা বা বোঝা যায়৷ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যে কোনও এনার্জি বা শক্তিকে বিশ্লেষণ করতে সমর্থ৷
এমন আরও বহু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ভূতের অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে ৷ তবে ভূতে যাদের বিশ্বাস, তারা কখনোই এসব বৈজ্ঞানিক যুক্তির ধার ধারে না৷ তারাই তাদের মনের মধ্যে ভূতের লালন-পালন করেন৷ তাই তাদের এই কল্পনার গল্পগাঁথা টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরে টিআরপি বাড়ানোর কৌশলকে রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজ্ঞান সংগঠনগুলি৷ ভবিষ্যতে এই ধরণের অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আনার দাবিও উঠেছে৷