মুম্বই: যথেষ্ট পুলিশকর্মীদের পাহারাতেই রিয়া চক্রবর্তী এনসিবি অফিসে ঢুকছিলেন। তা সত্ত্বেও রিয়াকে তাড়া করেছিলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তাদের এই আচরণকে বলিউডের সেলিব্রিটি মহল বর্বরোচিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ সংবাদকর্মীদের মিডিয়ার শকুন তকমা দিয়েছেন। কেউ সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে, প্রশ্ন তুলেছেন যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকা স্বত্বেও এমন কেন অমনটা হল।
অনেকে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে টুইট করে জানিয়েছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও অপরাধীদের সঙ্গে এ ধরণের আচরণ কি করা যায়? যারা তা করল তাদের কি বিচার হতে পারে না? মিডিয়া রিয়ার সঙ্গে যে রকম আচরণ করছে তাতে রীতিমতো ধিক্কার জানিয়েছেন অনেকেই। করোনা ভাইরাস অতিমারির সময়ে শারীরিক দূরত্বের বিধি মানার কথা ঢালাও প্রচার হচ্ছে। কিন্তু সেদিন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা রিয়ার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে সেই বিধি অবলীলায় ভেঙে ফেললেন। মিডিয়াকর্মীদের ওই ধরণের আচরণকে ভর্ৎসনা করেছেন মুম্বাই সিনেমা দুনিয়া।
আরও পড়ুন: মুখ খুললেন অনুরাগ, ফাঁস করলেন সুশান্তের মৃত্যু দিনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট
শারীরিক দূরত্বের প্রসঙ্গ টেনে অনেকেই ঠাট্টা করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, সামাজিক দূরত্বের চূড়ান্ত নজির স্থাপন করলেন সংবাদকর্মীরা। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন সভ্য সমাজ কি এভাবে কাজ করে? ন্যায়বিচারের পথটা যে এ রকম সেটা যেন বিশ্বাস করতে না হয়।
রিয়া চক্রবর্তীর গায়ে গণহারে অপরাধী তকমা দেগে দেওয়া দেখে তার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আধুনিক ভারতে এমনটা ঘটতে দেখা মর্মান্তিক। এটা আইনি ভিত্তির প্রশ্ন নয়, সামাজিক আচরণের প্রশ্ন। নৈতিক আদর্শের উচ্চ মানের মাপকাঠি তৈরি করবেন, এমন নেতাদের এখন দরকার।’
রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারের ঘটনায় রীতিমতো শঙ্কিত বুদ্ধিজীবী মহল। তাঁরা বলছেন, এতো বিচার বা জিঙ্গাসাবাদ নয়, বরং একটি মেয়েকে পীড়ন করার দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা। সেটা করার জন্যেও অন্য এক ধরণের মানসিকার দরকার হয়। এর পিছনে সমাজের গভীরে প্রোথিত নারী-বিদ্বেষের শিকড় দেখছেন সমাজতত্ত্ববিদরা। তাঁরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, নারী নরকের দ্বার-মার্কা মান্ধাতার আমলের ধ্যানধারণা এখনও আমাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। আজকের মেয়েরা নানা দিকে এগিয়ে গেলেও সুযোগ পেয়ে তাঁদের ধস্ত করার মনটা কিন্তু পুরোদস্তুর রয়ে গিয়েছে।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর কারণ এখনও অমীমাংসিত। সেই ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য তোড়জোর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার এটাও মনে হচ্ছে প্রেম ঘটিত কারণ সামনে আসায় প্রেমিকের মৃত্যুতে একটি খলনায়িকার যেন দরকার হয়ে পড়েছে। কে কী দোষ করেছে, সত্যি-মিথ্যে কোনটা, তা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু তর সইছে না। রিয়া চক্রবর্তীকে পাওয়া গিয়েছে। তারপর থেকে সমাজ রাগ ক্রোধ উগরে দিচ্ছে তার ওপর।
আরও পড়ুন: বছর খানেক আগে মাদকাসক্ত মেয়েকে নিয়ে রিয়ার টুইট ভাইরাল
তবে রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতারের পরেই ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ ডাক দিয়েছেন মুম্বাইয়ের অভিনেত্রীরা। সেই ডাকে সরব হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। পাশাপাশি একই সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে রিয়ার জন্য ন্যায়বিচারের দাবি।
তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান, সোনাম কাপুর, জোয়া আখতার, শ্বেতা বচ্চন নন্দ, দিয়া মির্জা, শিবানী দান্দেকর, ফারহান আখতার, অভয় দেওল-সহ আরও অনেকেই। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি উদ্ধৃতি শেয়ার করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে রিয়া চক্রবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের তৃতীয় দিন যখন এনসিবির দফতরে সেই সময় তার টি-শার্টেও লেখা ছিল ‘রোজেস আর রেড, ভায়োলেটস আর ব্লু, লেটস স্ম্যাশ প্যাট্রিয়ার্কি, মি অ্যান্ড ইউ’। অর্থাৎ গোলাপ লাল হয়, বেগুনি নীল হয়, আসুন পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে ভেঙে ফেলি, আমি এবং আপনি। বলিউডে এরই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। এই উদ্ধৃতিটিই তারকারা তাদের নিজস্ব ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন এবং অনেকেই রিয়ার পক্ষে বিচারও চেয়েছেন।