কলকাতা: বছর ছয়েক আগে বেলাশেষের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় বিশ্বনাথ এবং আরতির। জীবনের প্রায় শেষ লগ্নে এসে দাঁড়ানো এই প্রবীণ দম্পতি ছাপোষা সাদামাটা সংসার এবং জীবনযুদ্ধের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন একে অপরের প্রতি অমলিন ভালোবাসা। আর তাঁদের সেই অনবদ্য ভালোবাসার গল্প বলতে যখন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা দাস পরিচালিত বেলাশেষে তখন যেন বাঙালির আবেগের সমস্ত বাঁধ ভেঙেছিল। ২০১৬-এর পর ২০২২। বেলাশেষের দীর্ঘ ৬ বছর পর ফের বেলাশুরুর হাত ধরে দর্শকের সামনে এলেন বিশ্বনাথ-আরতি। তবে এবারের যাত্রাটা একটু অন্যরকম। সিনেমার পর্দায় বিশ্বনাথ এবং আরতির রসায়ন দর্শক চুটিয়ে উপভোগ করলেও বাস্তবে কিন্তু মানুষ দুটি আর নেই। ২০২২ সালে দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল বেলাশুরু ততদিনে ফাঁকা হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর চেয়ার। সিনেমার পর্দায় তাঁদের ভালোবাসা আছে, আছে তাদের দাম্পত্যের দুষ্টু মিষ্টি রসায়ন, মনের মনিকোঠায় সদা অমর আসনে বিরাজমান বিশ্বনাথ আরতি। শুধু ইহলোক থেকে ছুটি নিয়ে পরপারে বসে দর্শকের এই উপচে পড়া আবেগ উপভোগ করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। বাংলা সিনেমায় এমন ঘটনা বিরল। সিনেমা আছে, আছে চরিত্র। কিন্তু সেই চরিত্রের পিছনে যাদের অবদান সিনেমা মুক্তির সময় শুধু নেই তাঁরা। আর সেই বিরল ঘটনাকে স্মরণ করেই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে কার্টুনের মাধ্যমে অনন্য সম্মান জানাল বিখ্যাত ডিয়ারি সংস্থা আমুল।
সোমবার সকালেই মুক্তি পেয়েছে আমুলের এই কাটুন যেখানে সিনেমার মতো কার্টুনের বিশ্বনাথও পরম যত্নে চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন স্ত্রী আরতির। বেলাশুরুর পোস্টারের এই ছবিকেি কার্টুন বানিয়ে অভিনেতা এবং অভিনেত্রীকে সম্মান জানিয়েছে এই ডিয়ারি সংস্থা। ইতিমধ্যেই আমলের এই কার্টুনটি শেয়ার করেছেন বেলাশুরুর বাকি কলাকুশলীরা। আমুলের এই অনন্য সম্মান দেখে আবেগতাড়িত সিনেমার পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এটাই হয়তো প্রাপ্য ছিল বিশ্বনাথ-আরতির।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে যখন দেশজুড়ে করোনার বাড়বাড়ন্ত তখন মহামারীকে মাথায় করেই বেলাশুরু শুটিংয়ের কাজ সেরেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই ছবির কাজ শেষ হওয়ার পরেই করোনা আক্রান্ত হন তিনি এবং দীর্ঘ আড়াই মাসের যুদ্ধ শেষে পরাস্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন অভিনেতা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কয়েক দিন পরেই ইহলোক থেকে ছুটি নেন পর্দার আরতিও। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ২০২১ সালেই প্রয়াত হন অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। এরপর বিশ্বনাথ- আরতিকে ছাড়াই এগিয়েছে সিনেমার কাজ। এদিকে সৌমিত্র স্বাতীলেখার শেষ এই কাজ দেখবে বলে আকুল দর্শকমহল। তাদের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে গত ২০ মে। ওইদিনই শেষবারের মতো হাত ধরে একই সঙ্গে পর্দায় ফিরলেন বিশ্বনাথ-আরতী, ওরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।