কলকাতা: তাঁদের দু’জনের কর্মজীবন ছিল একে অপরের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ একজনের দুনিয়া ছিল লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনে ভরা৷ সেই সঙ্গে ক্ল্যাপস্টিক, মেক আপে পরিপাটি সজ্জা। অন্য জনের সঙ্গী স্টেথোস্কোপ, ছুরি, কাঁচি। দুই বোনের কর্মজগৎ সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও তাঁরা ছিল এক আত্মা, এক প্রাণ৷ একজন প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা, অন্যজন তাঁর দিদি ঐশ্বর্যা শর্মা।
আরও পড়ুন- আচমকা অসুস্থ কমল হাসান, তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে
ছোট থেকেই দুই বোনের অটুট বন্ধন৷ কিন্তু ২০ ডিসেম্বর সেই বন্ধন ছিঁড়ে চিরবিদায় নেন ঐন্দ্রিলা৷ রবিবার দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিট৷ ইতি পড়ে ঐন্দ্রিলার জীবনে। বোনকে হারিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন ঐশ্বর্যা৷ নিজেকে যেন স্থির রাখতে পারছেন না তিনি। বারবার ঘিরে ধরছে পুরনো স্মৃতি৷ মনে পড়ে যাচ্ছে বোনের সঙ্গে কাটানো আনন্দের সেই মুহূর্তগুলো৷ এই ক’দিনে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর ছোটবেলার অনেক ছবি শেয়ার করেছেন ঐশ্বর্যা৷ জানিয়েছেন বুনুকে ফিরে আসার কাতর আর্জি৷ বৃহস্পতিবার সকালেই ‘বুনু’র সঙ্গে কাটানো আরও একটি মিষ্টি মুহূর্তের সকলের সঙ্গে শেয়ার করে নিলেন তিনি।
ওই ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, সোফার উপরে হলুদ পরি সেজে বসে রয়েছেন তাঁর আদরের ছোট বোন। একপাশে মনের মানুষ সব্যসাচী৷ অন্যপাশে দিদি ঐশ্বর্যা৷ বোনের জন্মদিন বলে কথা৷ চকোলেট কেক কাটা হচ্ছে। তার পর গালে মাখামাখি অবস্থা। তার মধ্যেই বোনের গালে চুমু খেয়েই যাচ্ছেন ঐশ্বর্যা। এই ছোট ছোট স্মৃতিগুলি ভিড় করে আসছে তাঁর মনে। উথাল পাতাল হচ্ছে মনের অন্দরে৷
আদরের বোনকে হারানোর পর থেকে প্রতিটা দিন যেন তাঁর কাছে বছরের সমান। দিদি আর বোনের মধ্যে যে এত গভীর বন্ধুত্ব ছিল, তা আরও বেশি উপলব্ধ যাচ্ছে অভিনেত্রীর অবর্তমানে। এক দিন আগেই ঐশ্বর্যা লিখেছিলেন, “অনেকদিন তো হল, এবার তাড়াতাড়ি চলে আই বুনু। তুই ছাড়া আমি যে পঙ্গু। কে আমাকে সাজিয়ে দেবে বল তো? কে আমার ছবি তুলে দেবে ? কে না বলা মনের কথাগুলো আমার মুখ দেখে বুঝে যাবে?”
এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই বোনের ছোটবেলার ছবি শেয়ার করে ঐশ্বর্যা লিখেছিলেন, ‘আমার ছোট্ট বুনু … এইভাবেই সারাজীবন দু’জন দু’জনের হাত ধরে বেঁচে ছিলাম আছি এবং থাকবো..।’ না থেকেও ভীষণ ভাবে তাঁর উপস্থিতি যে সর্বত্র।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঐন্দ্রিলার শরীরে বাসা বেঁধেছিল কর্কট রোগ। সেই তখন থেকে শুরু হয় লড়াই৷ এক বার নয়, দু-দু’বার ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরেছিলেন ফিনিক্স হয়ে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হল না৷ ব্রেন স্ট্রোকের পর ঐন্দ্রিলার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচারও করেছিলেন চিকিৎসকরা। বায়োপসি রিপোর্টে দেখা যায়, ঐন্দ্রিলার ‘ইউয়িংস সারকোমা’ হয়েছে। এটা এক ধরনের ক্যানসার। যা দ্রুত ঐন্দ্রিলার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ এই রোগ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। মাত্র চব্বিশেই ফুরিয়ে যায় তাঁর জীবনের অধ্যায়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>