Aajbikel

উদ্যোক্তাদের গাফিলতিতেই কেকে'র মৃত্যু! লাইভ শোয়ে কড়াকড়ি চান অঙ্কিত, কবিতারা

 | 
kk

মুম্বই: অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের গাফিলতিতেই এমন অকালপ্রয়াণ সঙ্গীতশিল্পী কেকের। মঙ্গলবার রাতে কলকাতার লাইভ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলে লাইভ শোয়ের ক্ষেত্রে আরো কড়াকড়ি ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছেন বলিউডের সংগীতজগতের কলাকুশলীরা। প্রসঙ্গত মঙ্গলবার রাতে কলকাতার নজরুল মঞ্চে লাইভ অনুষ্ঠান শেষেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত না দিয়েই তিনি প্রয়াত হন। কেকের এই অপ্রত্যাশিত মৃত্যু যেমন মেনে নিতে পারছেন না তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুগামীরা ঠিক তেমনই তার এই অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বলিউড। ইতিমধ্যেই বলিউড সংগীতজগতের একাধিক কলাকুশলী লাইভ শোয়ের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেই সুর ছড়াতে শুরু করেছেন। বলিউডের প্রখ্যাত গায়ক অঙ্কিত তিওয়ারি, কবিতা শেঠের মত একাধিক সংগীতশিল্পীদের মত, উদ্যোক্তাদের অবহেলার কারণেই এইভাবে চলে যেতে হল কেকে কে। অন্যদিকে গায়ক কৈলাশ খের লাইভ পারফর্মেন্সের সময় একজন সংগীতশিল্পী কতটা নিরাপদ সেই ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন। সব মিলিয়ে কেকের এই অকাল প্রয়াণ বলিউডকে।

 কৈলাস খের, অঙ্কিতের মতো একাধিক গায়কের মত, একজন সঙ্গীত শিল্পী যত না বেশি সিনেমায় গান গাইতে ভালোবাসেন তার থেকেও তারা ঢের বেশি উৎসাহিত থাকেন তাদের লাইভ পারফরম্যান্স নিয়ে। প্রিয় গায়ককে মঞ্চে দেখে যেভাবে উন্মাদনায় লাফিয়ে ওঠে দর্শককূল সেটাই গায়করা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু সেই সঙ্গেই লাইভ পারফর্মেন্সের সময় গায়ক কিংবা গায়িকা যে কতটা অনিরাপদ অবস্থায় থাকেন সেটাই সম্প্রতি প্রমাণ করল কেকের মৃত্যু। বলিউডের একাংশের মত, যদি অডিটোরিয়ামের মধ্যে এত বেশি লোক না থাকত এবং সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে কেকের লাইভ পারফরম্যান্স হত কিংবা নিতান্ত পক্ষে হলের  ভিতর একজন ডাক্তার থাকত তাহলে কেকে কে এইভাবে হয়তো অকালে চলে যেতে হত না। সেই সঙ্গে ওই তারা প্রশ্ন করছেন যখন কেকে নিজেই শরীর খারাপ লাগছে বলে আগে চলে যেতে উদ্যত হয়েছিলেন তখন তার গাড়ি কেন দেরিতে এল এবং তাকে সঙ্গে সঙ্গে কেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না?

 বলিউডের আরও এক প্রখ্যাত গায়ক কৈলাশ খের জানাচ্ছেন লাইভ পারফর্মেন্সে সময় উদ্যোক্তাদের বেশ কিছু জিনিস সর্বাগ্রে মাথায় রাখা দরকার। যখন কোন গায়ক গায়িকা স্টেজে উঠছেন তখন উদ্যোক্তারা যেন খেয়াল রাখেন স্টেজ এবং তাদের গ্রিন রুমের মধ্যে যেন খুব বেশি লোকজন দাঁড়িয়ে না থাকে। এই বিষয়টি তেমন উদ্যোক্তাদের নজরে রাখা উচিত ঠিক তেমনি গায়ক কিংবা গায়িকার সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদেরও সব সময় মাথায় রাখা দরকার। কৈলাস খের আরও বলছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠান দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে অদৃশ্য একটি কম্পেটিশন চলে। কে কত বেশি গায়কের ছবি কিংবা ভিডিও তুলতে পারবেন তারই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন সকলে। আর তার জেরেই মঞ্চের সামনে শুরু হয় হুটোপাটি। কিন্তু দর্শকদেরও মাথায় রাখা উচিত মঞ্চের ওপর যিনি গান গাইছেন তিনিও একজন মানুষ, কোনও মেশিন নয়। তাদের অতিরিক্ত উৎসাহের কারণে কখনও কখনও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আর তাই উদ্যোক্তাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে তারা কিভাবে ভিড় সামলাবেন।

বিদেশের প্রসঙ্গ টেনে এনে গায়ক-গায়িকারা বলছেন, বিদেশে কোন গায়ক গায়িকা কিংবা শিল্পীরা ইনসিওরেন্স ছাড়া লাইভ পারফরম্যান্স করেন নাম। যদি সেই গায়ক-গায়িকার ইনসিওরেন্স করার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সেই লাইভ শোর পারমিশন দেওয়া হয় না। একইভাবে ইনসিওরেন্সের সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার ব্রিগেড, এম্বুলেন্স, ডাক্তার সমস্ত কিছু ইভেন্টের নিকটবর্তী জায়গাতেই উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই সমস্ত কিছুই আমাদের দেশে প্রচলিত নয়। আমাদের দেশের সরকারও শিল্পীদের তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাই তাদের নিরাপত্তা কিংবা তাদের স্বাস্থ্যকে এত সহজভাবে নেওয়া হয়। কিন্তু এগুলোর যে গুরুত্ব রয়েছে সেটাই সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করল।

 অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের উপরে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে গায়িকা কবিতা সেট বলেছেন, 'কলকাতার মতন মেট্রো সিটিতে যদি অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বুঝতে না পারেন তাদের কি কি করনীয় তাহলে তার থেকে দুঃখের আর কিছু হয়না। যারা এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল তারা নিজেরাই জানতেন না তাদের ঠিক কি করা উচিত এবং কি কি করা উচিত নয়। তাদের কাছে ঠিকঠাক কোনো তথ্যই ছিল না। আমি নিজেও সম্প্রতি কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান করে এসেছি এবং সত্যি কথা বলতে কি সেই অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো নয়। আমি দেখেছি অনুষ্ঠান চলাকালীনই স্টেজে থাকা বেশকিছু দর্শক খাবার খেতে শুরু করেন। এই ধরনের কাজ শিল্পীদের যে শুধু অসম্মানিত করে তা নয়, তাদেরকে কষ্ট দেয়। যদি আপনারা কোন শিল্পীকে অনুষ্ঠান করতে ডাকেন তাহলে তাদের নিরাপত্তার কথা সবসময় মাথায় রাখা উচিত। আজকালকার দিনে যে কোন অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের থাকা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু এক্ষেত্রে সে সবকিছুই মানা হয়না। কেকের যে সমস্ত ভিডিও সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে অত্যন্ত গরমে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল, তাঁর খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু তারপরেও গায়ককে সুস্থ করার জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে যদি কোনও চিকিৎসক দেখতেন কিংবা তাকে পাম্প করতেন তাহলে হয়তো এভাবে কেকে আমাদের ছেড়ে চলে যেতেন না।'

Around The Web

Trending News

You May like