মুম্বই: দু’চোখে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সুদূর লন্ডন থেকে ভারতে পা রেখেছিলেন গীতা। জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের তালিকায় নিজের জায়গাটা পাকা করে নেওয়া৷ কিন্তু ভাগ্যদেবতা তাঁর জন্য অন্য কিছুই লিখে রেখেছিলেন৷ গীতা সংবাদ শিরোনাম কাড়লেন ঠিকই, কিন্তু নিজের কাজের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে৷ একটা সময় আশা ছেড়ে দেন গীতা বাসরা৷ বলিপাড়া থেকে সরে আসেন তিনি।
আরও পড়ুন- চলে গেলেন ‘পরিণীতা’র পরিচালক, ৬৭-তে প্রয়াত প্রদীপ সরকার
স্কুলের গণ্ডি পার করে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বাবা-মাকে ছেড়ে লন্ডন থেকে মুম্বইয়ে চলে আসেন গীতা৷ অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর গীতা কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির মারপ্যাঁচ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না৷ ২০০৬ সালে প্রথম বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ আসে৷ আদিত্য দত্তের পরিচালনায় ‘দিল দিয়া হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করেন। ইমরান হাশমি, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো তারকাদের সঙ্গে প্রথম ছবিতে অভিনয় করলেও সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য ট্রেন’৷ এই ছবি হিট করে এবং গীতার অভিনয় দর্শকের মনে ধরে। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন গীতা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে লাগানো হয় অভিনেত্রীর পোস্টার৷ কেরিয়ারের প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেতেই গীতার জীবনে আসে নতুন এক চরিত্র। ক্রিকেটার হরভজন সিং।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় গীতার পোস্টার দেখে তাঁকে ভাল লেগে যায় ভাজ্জির। কিন্তু তিনি গীতার পরিচয় জানতেন না৷ পরে ‘দ্য ট্রেন’ ছবির একটি গানের দৃশ্যে গীতাকে অভিনয় করতে দেখেন৷ এর পরেই তিনি যুবরাজ সিং-এর শরণাপন্ন হন৷ অভিনেত্রীর সঙ্গে হরভজনের যোগাযোগ করিয়ে দেন যুবি। কথাও হয় দু’জনের৷ কিন্তু প্রায় দশ মাস হরভজনকে এড়িয়ে চলেন গীতা। এমন এক সময় আইপিএল খেলা দেখার জন্য দুটো টিকিটের প্রয়োজন হয় গীতার। সেটা কোনও ভাবেই জোগাড় করতে পারছিলেন না। অগত্যা হরভজনের থেকেই সাহায্য নেন৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে গীতাকে দু’টি টিকিট পাঠিয়ে দেন৷
কিন্তু ওই টিকিটে গীতা নন, খেলা দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর গাড়িচালক ও তাঁর এক আত্মীয়৷ তবে ওই টিকিটের সূত্রে হরভজনের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয় গীতার। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে৷ ধীরে ধীরে জমে ওঠে প্রেম৷ তাঁরা ডেট করতে শুরু করেন৷ বিভিন্ন কফিশপে দেখা যাতে থাকে গীতা এবং হরভজনকে৷ তাঁরা প্রেম লুকাতে চাইলেও ক্যামেরার লেন্সকে ফাঁকি দিয়ে পারেননি৷
হরভজনের সঙ্গে গীতার নাম জড়ানোর পরই ছবি নির্মাতারা গীতাকে আর কাজ দিতে চাননি। তাঁরা ভেবেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির নবাগতা এই অভিনেত্রী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মানেই খুব তাড়াতাড়ি বিয়েও সেরে ফেলবেন। পরে আর অভিনয় করবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকেন৷ হরভজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর ৪টে বড় ছবির কাজ তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল বলেও জানান গীতা৷ তার পরেও অবশ্য কয়েকটি হিন্দি ছবি ও মিউজিক ভিডিয়োতে তিনি কাজ করেন৷ তবে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা পাকা করতে পারেননি৷
২০১৫ সালে হরভজনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন৷ বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তাঁর কোলে আসে ফুটফুটে মেয়ে৷ কন্যা সন্তান জন্মের পাঁচ বছর পর পুত্র সন্তানের জন্ম দেন গীতা৷ তার আগে দু’বার মিসক্যারেজও হয় তাঁর৷ এত বছর পর পবন ওয়াদেওয়ারের পরিচালনায় ‘নোটারি’ নামের ছবিতে দেখা যাবে গীতাকে। বাঙালি অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করবেন হরভজন-ঘরণী৷
বলিউডে অনেক ওঠাপড়া দেখেছেন অভিনেত্রী ইশা কোপিকরও৷ বলিপাড়ায় পা রাখার পর ‘খল্লাস গার্ল’ নামেই বেশি পরিচিতি পান তিনি৷ ইশার কেরিয়ার শুরু হয়েছিল দক্ষিণী ছবি দিয়ে৷ পরে বলিউডেও কাজ করেন৷ ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে ইশার কাছে। কিন্তু ছবির অভিনেতা নাকি তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। এক সাক্ষাৎকারে ইশা বলেছিলেন, ‘‘এক বলি অভিনেতা আমার সঙ্গে একা দেখা করতে চাইছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি যেন নগ্ন হয়ে তাঁর সামনে যাই। তা হলেই ছবিতে ভাল কাজ পাব৷ কিন্তু অভিনেতার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়নি।’’
ইশা আরও দাবি করেন, বলিপাড়ার এক প্রযোজকও নাকি তাঁকে বলেছিলেন, কাজ পেতে গেলে অভিনেতাদের সুনজরে থাকতে হয়। কিন্তু উত্তরে ইশা জানিয়েছিলেন, অভিনয়ের মাধ্যমে যদি পরিচিতি না গড়ে ওঠে, তবে অন্য কোনও উপায়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠতে চান না।
বড় পর্দায় যে কোনও চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে পটু সঞ্জয় মিশ্র। বিজ্ঞাপন জগৎ থেকে বলিউডে পা রাখা এই অভিনেতা কেরিয়ারের শুরুতেই অভিনয় ছেড়ে বাসন মাজার কাজ নিয়েছিলেন৷
পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না সঞ্জয়৷ দশম শ্রেণিতে দু’বার ফেলও করেন৷ বারাণসীতে পড়াশোনা শেষ করে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন সঞ্জয়। ছোট পর্দায় কাজ করেছেন৷ বড় পর্দায় সঞ্জয়ের প্রথম অভিনয় ১৯৯৫ সালে ‘ওহ ডার্লিং! ইয়ে হ্যায় ইন্ডিয়া’ নামের হিন্দি ছবিতে৷ কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর তিনি বেশ ভেঙে পড়েন৷ গঙ্গোত্রী চলে যান৷ গঙ্গোত্রী যাওয়ার রাস্তায় একটি ধাবায় কাজ নেন সঞ্জয়। সেখানে চা এবং ওমলেট বানাতেন৷ দোকানের মালিক তাঁকে দিয়ে বাসনও মাজাতেন। সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘‘দোকানের মালিক আমাকে বাসন মাজতেও বলেছিলেন। সারা দিন পঞ্চাশটি কাপ মাজতাম৷ দিনের শেষে ১৫০ টাকা করে আমার হাতে দিতেন৷’’ পরে তাঁকে চিনতে পেরে যান এক পর্যটক৷ অভিনেতার মায়ের কাছে তাঁর গঙ্গোত্রী যাওয়ার খবর পৌঁছাতেই তিনি অভিনেতাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন৷
সম্পর্ক এবং ভালবাসায় সেভাবে বিশ্বাস করতেন না সঞ্জয়। রোশনি আচার্যর সঙ্গে বিয়ে হলেও তা বেশি দিন টেকেনি। শোনা যায়, বলি অভিনেতা রঘুবীর যাদবের সঙ্গে রোশনির বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। তাঁরা নাকি একত্রবাসও করতেন।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>