কলকাতা: প্রেমের গান থেকে শুরু করে দেশাত্ববোধক গান, তথাকথিত আইটেম সং… সবেতেই ছিল লতার গলার যাদু। তাঁর গলার গান শুনে আবেগপ্রবণ হননি এমন মানুষ খুবই কম। কিন্তু তা বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী? আজ্ঞে হ্যাঁ। লতার গলায় গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু। কিন্তু কোন গান এই অসাধ্য সাধন করেছিল তা জানতে হবে।
১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর দেশ তখন কার্যত বিধ্বস্ত। সকলে তখন যুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। পরপ সভা, অনুষ্ঠান করে টাকা তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের শিল্পীদের এক জায়গায় এনে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে সর্বত্র। এমনই এক অনুষ্ঠানে গান করতে আসেন লতা। ১৯৬৩ সালে দিল্লির রামলীলা ময়দানে যুদ্ধে শহিদ জওয়ানদের স্ত্রী-পরিবারের জন্য যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল সেখানে এসে এমন এক গান গেয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী যে তা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু। সেই গান ছিল, ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’। সুরকার কবি প্রদীপ লতাকে দিয়ে এই গান গাইয়েছিলেন বিনা কোনও রিহারস্যালে। বিশিষ্ট মহলের লোকজন, সাধারণ মানুষের সামনে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি নেহরু, এই গান শুনেই।
১৯৪৫ সালে যখন প্রথম মুম্বই আসেন তখন তাঁর ‘পথ প্রদর্শক’ ছিলেন গুলাম হায়দার। লতার গানের গলা শুনে তিনি মুগ্ধ হলেও তা পছন্দ হয়নি তৎকালীন বিখ্যাত বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের। হায়দারের ‘মজবুর’ ছবিতে ১৯৪৮ সালে গান রেকর্ড করেন লতা। ১৯৪৯ সালে তাঁর গান এল ‘আয়েগা আনেওয়ালা’, সেটা হিট। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আজ যখন লতা মঙ্গেশকর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তখন তাঁর ঝুলিতে রয়েছে হিন্দি সহ আরও পঁয়ত্রিশটা ভাষায় অন্তত হাজার খানেক গান, ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে ও একাধিক জাতীয় পুরস্কার।