আজ বিকেল: একজন আইএএস আধিকারিকের সারা দিনের কাজ আসলে কী কী, এনিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই নানারকম কৌতূল রয়ে গিয়েছে। দেশের বেশকয়েকজন আইএএস আধিকারিক তাঁদের জন্য নির্ধারিত কর্মযজ্ঞে যোগ দিয়ে এমন কামাল দেখিয়েছেন যে অল্পদিনেই প্রচারের আলো কেড়ে নিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দারাও ধন্য ধন্য করছে।
আজ এমনই একজনের কথা বলব, অশেষ সিং, ২০১০ মধ্যপ্রদেশে ক্যাডারের এই আইএএস বর্তমানে ইন্দোর শহরের মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের পদে কর্মরত। তাঁর অন্যতম দায়িত্ব ছিল শহরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত ১০০ একরের জঞ্জালের ভ্যাটকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে, যেখানে জমা ময়লার পরিমাণ ১৩ লক্ষ টন। মাত্র ছমাসেই এই জঞ্জালের পাহাড়কে মুছে দিয়েছেন অশেষ সিং। এখন ওই ১০০ একর জমি উন্মুক্ত রয়েছে, খুব শিগগির সেখানে চারাগাছ রোপণ করা হবে। সেজন্য এখন জমি তৈরির কাজ চলছে। কয়েকবছরের মধ্যেই শহরের প্রাণকেন্দ্র ঢাকবে সবুজে, যা ইন্দোরবাসীর মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহে অন্যতম ভূমিকা নেবে।প্রাণ ভরে নিঃশ্বাসের সুযোগ পাবেন বাসিন্দারা।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আইএএস জানান, সকালে সাড়ে ছটা নাগাদতিনি পায়ে পায়ে শহর দেখতে বেরিয়ে পড়েন। শহরের যেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ চলছে, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। কোথাওকোনও রকম বাধা এলেতা জেনে নিয়ে দূর করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়। এজন্য প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত লোকজন ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও যারা বাধা দিচ্ছেন সবার সঙ্গেই কথা হয়। বেলা ১১টা পর্যন্ত এই পরিক্রমা চলে। তারপর নিজের বাসভবনে ফিরে এসে তৈরি হয়ে অফিসে যাওয়া। ১২টা থেকে দুটো পর্যন্ত সেখানে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আইএএসের মূল কাজ জনতার সঙ্গে, তাই তো তাঁদের পাবলিক সার্ভেন্ট বলা হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ কি চাইছেন, কোন সরকারি প্রকল্প থেকে তাঁরা বঞ্চিত, কোন আধিকারিক তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন না।
কোনওপ্রকল্প শুরু হলে মানুষ তার ভালর থেকে খারাপ নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়, পরামর্শ করতে সেই কমিশনারের কাছে চলে আসে। উদ্বিগ্ন জনতাকে বোঝানোর পাশাপাশি উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করাটাও তাঁরই কাজ। এসবের জন্য নিজেকেও মানসিকভাবে সুস্থির থাকতে হয়। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট জরুরি, যখন কোনওসমস্যা নিয়ে আলোচনা চলে তখন মূলে গিয়ে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করি। কিন্তু পরবর্তী সমস্যায় চলে গেলে আগেরটা নিয়ে ভাবি না। এটা করতেই হবে, নাহলে সমস্যার গোলকধাঁধায় পড়ে পাক খেতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলব। নিদান দেওয়ার বদলে নিজেই বিপদে পড়ে যাব, এটা কখনওই কাম্য হতে পারে না।
যাইহোক দুটোর পরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক থাকে, আমলা-মন্ত্রীরাও প্রয়োজনে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন। বৈঠকেসমাধান সূত্র পাওয়াটা জরুরি তাই সময় ধর্তব্যের মধ্যে রাখা হয় না, কখনও কখনও ঘড়ির কাঁটা রাত নটার ঘরে পৌঁছে যায়। রবিবার ও সরকারি ছুটির দিনে আইএএস-দের ব্যস্ততা চরমে ওঠে। এদিন আধিকারিকদেরসঙ্গে জরুরি বৈঠক আবশ্যক। কারণ সাধারণ মানুষ এদিন তাঁদের ধারেকাছে আসেন না। তাই ছুটির দিনেই সারতে হয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজকর্ম।