‘ভলান্টিয়ার’ শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের উদ্যোগ রাজ্যের! বিজ্ঞপ্তি শিশু শিক্ষা মিশনের

নাম পাঠানোর সময়সীমা বাড়িয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদকে নির্দেশিকা পাঠালো পশ্চিমবঙ্গ শিশু শিক্ষা মিশন। প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের নাম পাঠানোর সময়সীমা ২৯ শে, ফেব্রুয়ারি২০২০ থেকে বাড়িয়ে ৪ মার্চ,২০২০ করা হয়েছে।

কলকাতা: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে। এই মামলা ও মামলা নিষ্পত্তির জেরে বেশ কয়েক বছর ধরে থমকে আছে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ। চলতি শিক্ষাবর্ষে বেতনক্রম থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সবক্ষেত্রেই পুনর্বিন্যাস করা হলেও শিক্ষক ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে স্কুলগুলোতে। শিক্ষক ঘাটতি মেটাতে বেশ কয়েক বছর আগে এই ভলান্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয় রাজ্যজুড়ে। বিশেষ করে পাহাড়ের এমএসকেগুলিকে শিক্ষক সংকট থেকে বাঁচাতে সেখানকার পরিচালন কমিটি এই ভলান্টিয়ার শিক্ষকদের নিযুক্ত করেছিল। এখন সমতলেও এই ভলান্টিয়ার শিক্ষকেই আস্থা রাখতে চাইছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর।

এরজন্য রাজ্যের এমএসকে গুলিতে ভলান্টিয়ার টিচার নিয়োগের পাশাপাশি নিযুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বৃদ্ধি ও স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু শিক্ষা মিশন। এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নির্ধারিত শূন্যপদ ও ৩১/১২/২০০৯-এর আগে পঞ্চায়েত সমিতি অনুমোদিত প্যানেল অনুসারে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি মে সম্প্রসারক/ সম্প্রসারিকা এবং মুখ্য সম্প্রসারক/ সম্প্রসারিকা পদে নিয়োগ শুরু করেছিল কিন্তু ২০১০ সালের ১ জানুয়ারির পর থেকে পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তর আর কোনও শিক্ষা সম্প্রসারক নিয়োগ করেনি। তাই স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর পরে নিযুক্ত ভলান্টিয়ার টিচারদেরও এক্ষেত্রে গ্রাহ্য করা হবে না। প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। চলতি শিক্ষাবর্ষে অর্থাৎ ২০২০-তে ফের সেই প্যানেল থেকেই রাজ্যের এমএসকে গুলিতে ভলান্টিয়ার টিচারদেরও স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে মিশন। ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের এমএসকেগুলিতে যত ভলান্টিয়ার টিচার নিযুক্ত হয়ে এখনও কর্মরত, তাঁদের যাবতীয় তথ্য পাঠানোর সময়সীমা ২৯ শে ফেব্রুয়ারি,২০২০ থেকে বাড়িয়ে  ৪ মার্চ,২০২০ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের দাবি মেনে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলির (এমএসকে) ভারপ্রাপ্ত মুখ্য শিক্ষা সম্প্রসারক (প্রধান শিক্ষক)-দের ভাতাবৃদ্ধির উদ্যোগও শুরু করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিশুশিক্ষা মিশন। ইতিমধ্যেই যাঁদের মাস্টার ডিগ্রি সম্পূর্ণ হয়েছে এবং শিক্ষক শিক্ষণ ডিগ্রি পেয়েছেন, তাঁদের ভাতা মুখ্য শিক্ষা সম্প্রসারকদের সমতুল করে দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। শুক্রবার মিশন অধিকর্তা শুক্তিসিতা ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের সমস্ত ভারপ্রাপ্ত মুখ্যশিক্ষা সম্প্রসারক এবং সম্প্রসারিকাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, ইউডাইস কোড, কাজে যোগদানের তারিখ এবং বর্তমান শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ তথ্যগুলি সুনির্দিষ্ট আকারে কমিশনে জমা দিতে হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একেশিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সাফল্য বলে দাবি করেছেন মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম, তিনি বলেন “দপ্তরে আন্দোলনের সময় এবং পরবর্তী কালেও দাবী জানানো হয়েছিল ইনচার্জ এবং মুখ্য সহায়ক/সহায়িকা ও সম্প্রসারক/সাম্প্রসারিকাদের জন্য, একে একে লড়াইয়ের মাধ্যমে সমস্ত দাবি আদায় হবে”। তিনি আরো বলেন,  “দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে) ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি৷ শিক্ষাকেন্দ্রগুলি ধুকছে৷ ভলান্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তা নিছকই গিমিক” বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তাতে একজনও শিক্ষক নিয়োগ হবে না৷ তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পক্ষ থেকে বারংবার শিক্ষামন্ত্রীকে দাবী জানানো হয়েছে ৷ “এই বিজ্ঞপ্তির ফলে রাজ্যজুড়ে কিছু শাসকপন্থী নেতারা ভুল বুঝিয়ে তোলা তুলবে কিন্তু আদৌ একজনও শিক্ষক নিয়োগ হবে না৷ তাই শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের দাবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে বাঁচাতে স্থায়ী  শিক্ষক নিয়োগ হোক৷

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুলে ভলেন্টিয়ার ক্লার্ক পদের জন্য ৩০টি শূন্যপদে নিয়োগ করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। চাকরিপ্রার্থীদের এক বছরের চুক্তিতে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে৷ এরপর থেকেই এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে তুমুল অসন্তোষ।

আপাতত এক বছরের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভলেন্টিয়ার শিক্ষক পদে গ্রাজুয়েশনে ৫০ শতাংশ নম্বর সহ  ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে। ভলেন্টিয়ার ক্লার্ক পদে গ্রাজুয়েশনে ৪৫ শতাংশ নম্বর সহ এক বছরের কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ডিগ্রি থাকতে হবে৷ বয়স সীমা একই। আবেদনের ভিত্তিতে বাছাই করা চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা, কম্পিউটার টেস্ট, পার্সোনালিটি টেস্ট নেওয়া হবে৷ লিখিত পরীক্ষা হবে ৭০ নম্বরে৷ কম্পিউটার টেস্ট নেওয়া হবে ২০ নম্বরের ভিত্তিতে৷ ইন্টারভিউ হবে ১০ নম্বরের৷ সব মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ 

এদিকে, এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী যেখানে শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিএড বাধ্যতামূলক সেখানে শুধুমাত্র গ্রাজুয়েশনের ৫০ শতাংশ নম্বরের শর্তে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কারণ এই মুহূর্তে গোটা বাংলা জুড়ে কয়েক লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক পদপ্রার্থী রয়েছেন, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে অনিয়ম, মামলার গেরোয়। সেখানে তাদের বঞ্চিত করে ভলেন্টিয়ার শিক্ষকদের শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েশনের শর্তে কীভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে? ‘ভলেন্টিয়ার’ শিক্ষক নিয়োগের এই প্রবণতা আগামী দিনে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা মহলের একাংশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *