কালনা: চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পরেই জেলার জয়জয়কার শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলাগুলোতেও শহরের থেকে গ্রামের ফলাফল ভালো হয়েছে। চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট নিয়ে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পাশ করেছে। কেউ কেউ আবার মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। কালনার ভৈরবনালা এসকেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্বেষা ভট্টাচর্য ও পশ্চিম বর্ধমানের অনুশ্রী ঘোষ। অনুশ্রী রাজ্যে নবম ও অন্বেষা রাজ্যে দশম স্থান অধিকার করে নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
কলনা-১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায উত্তীর্ণ হয়েছে অন্বেষা ভট্টাচর্য। মাধ্যমিকে ৬৯৩ পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। টেলিভিশনে মেয়ের সাফল্যের খবর পাওয়ার পরেই ভট্টাচর্য পরিবারে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আনন্দে আত্মহারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুদ হোসেন জানান, প্রথম থেকেই পড়াশোনায় খুব মেধাবী। স্কুলের শিক্ষিক-শিক্ষিকারা অন্বেষাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। ওদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। উচ্চমাধ্যমিকে বাইরে থেকে সাহায্য এলে ভালো হয়।
পেশায় চাষি অন্বেষার বাবা রামকৃষ্ণবাবু বলেন, টেস্টের আগে দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করত। কিন্তু টেস্টের পর থেকে দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে। ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হতে চায়। এতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পরিবারের কপালে। নুন আনতে পান্তা ফোরানো বাড়িতে মাধ্যমিকের আগে সেভাবে টিউশন দিতে পারেনি মেয়েকে, সেখানে ডাক্তারির শখ কী করে পূরণ করাবে।
একই অবস্থা পশ্চিম বর্ধমানের অনুশ্রী ঘোষের। আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যান বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা রাজ্যের মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথম দশে নিজের জায়গা করে নিয়েছে অনুশ্রী। প্রথম থেকেই অনুশ্রী পড়াশোনার ভালো। তাই বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা। অনুশ্রীর বাবা জানান, স্কুল থেকে প্রায়ই টিফিন ফেরত আনত। পরে জালনাম টিফিনের সময় সে স্কুলের দিদিমনিদের কাছ থেকে পড়া দেখত। অনুশ্রী জানান, স্কুলের দিদিমনিরা না থাকলে, কোনওভাবেই এই রেজাল্ট সম্ভব হতো না। ক্লাস নাইন পর্যন্ত কোনও টিউশন ছিল না। ক্লাস টেন থেকে তিন জন গৃহ শিক্ষক ছিলেন বলে অনুশ্রী জানিয়েছে।