শাম্মী হুদা: বায়ুসেনার বিমান মিগ-২১ যেন দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায় গাডগিল দম্পতিকে। অনীল ও কবিতা গাডগিল,তাঁদের ছেলে অভিজিৎ গাডগিল,যিনি একজন বায়ুসেনার পাইলট। ২০০১ সালে ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে অন্য এক পাইলটের অনুপস্থিতিতে মিগ-২১-এর ককপিটে বসেছিলেন তিনি। সেই বিমানই রাজস্থানের সূতাগড়ে ভেঙে পড়লে অভিজিতের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়, পাইলট মাঝ আকাশে বিমান চালনায় কিছু ভুল করতেই এই বিপত্তি ঘটে। দীর্ঘদিন বায়ুসেনার কমান্ডার পদে ও পরবর্তিতেএয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট হিসেবে কর্মরত থাকার দরুন বিমান চালনা নিয়ে বিশদ জ্ঞান ছিল অনীল গাডগিলের। ছেলের মৃত্যুর জন্য বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষের এই সাফাই তাঁর মনঃপুত হয়নি। স্ত্রী কবিতার সঙ্গেই তিনি এই যুক্তি শোনা মাত্রই উড়িয়ে দেন। সাফ জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ছেলেকে হারাতে হল তাঁদের।
বলাবাহুল্য, একথা মুখে বলা যতটা সহজ তা প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু ততটাই কঠিন।দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের পর গাডগিল দম্পতির এই ধারণা মেনে নিতে বাধ্য হয় বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষ। এই নৈতিক জয়ের পর শান্তি পেয়েছিলেন পুত্রশোক গ্রস্ত বাবা-মা। অনীলবাবু জানান, ছেলে চাইত আকাশে উড়তে,তাই যেভাবে শিক্ষা দিলে সে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারে তাই দিয়েছিলাম।
বিমান চালনার নাড়ি নক্ষত্র জানে,এনিয়ে ভাবনার কিছু নেই। সেই ছেলে মিগ-২১ উড়িয়েই দুর্ঘটনার মুখে পড়ল,এমনটা তো কখনও কাম্য নয়। তার উপরে মিগ-২১ এর দুর্ঘটনার মুখে পড়া নতুন কিছু নয়। একের পর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ার দরুণ মিগ-২১ এর যান্ত্রিক গোলযোগই প্রশ্নের মুখে,এমতাবস্থায় বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর প্রসঙ্গে মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন ওই দম্পতি। ছেলের মৃত্যুশোকের উপরে খাঁড়ার ঘা চেপেছিল তাঁদের মাথায়। তবে এসবকিছুকে পাত্তা দেননি ওই দম্পতি। ঠিক করেছিলেন, আর কোনও বায়ুসেনার বিমান চালক অকালে যাতে ঝরে না যায় সেদিকটা মাথায় রেখে জিৎ অ্যারোস্পেস ইনস্টিটিউ প্রতিষ্ঠা করেন এই দম্পতি। সংস্থাটির মূল লক্ষ্যই হল যাঁরা আকাশে ওড়াকেই পেশা হিসেবে নিতে চান তাঁদের আগামীর পথকে প্রশস্ত করতেই এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা। বিমান চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সঠিকভাবে, যাতে কোনওভাবেই বায়ুসেনার বিমানচালকরা ওড়ার আগেই মৃত্যুমুখে পতিত না হন।
এই মুহূর্তে ৪৭০ জনকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দিতে পারে এই সংস্থা। শুধু প্রশিক্ষণই নয়, ইতিমধ্যে বিমান চালনার প্রশিক্ষণের সরকারি ছাড়পত্র হাতে পেয়েছেন গাডগিল দম্পতি, সংস্থার গুনগত মানের জন্য বিদেশ থেকে শংসাপত্র জুটিয়ে নিয়েছে জেএআই।