খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?

শাম্মী হুদা: মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ এলাকার তুলজাপুর, দূর দূর তাকিয়েও যেখানে স্বচ্ছলতার ছিটেফোটাও নজরে আসে না। এমনই এক জায়গা, তবে জীবন সংগ্রাম যেখানে কঠোর সেখানেই জন্মায় যুগপুরুষরা। যাঁরা নিজেদের গুণে বেবাক মরুভূমিকেও মরুদ্যানে পরিণত করেন, নিতান্ত হেলায় কেটে যাওয়া জীবন অন্যের জন্য অবলম্বন হয়ে ওঠে। আজ তেমনই একজনের কথা বলব শওকত আলি। প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তসীমায় পৌঁছেও যিনি

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?

শাম্মী হুদা: মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ এলাকার তুলজাপুর, দূর দূর তাকিয়েও যেখানে স্বচ্ছলতার ছিটেফোটাও নজরে আসে না। এমনই এক জায়গা, তবে জীবন সংগ্রাম যেখানে কঠোর সেখানেই জন্মায় যুগপুরুষরা। যাঁরা নিজেদের গুণে বেবাক মরুভূমিকেও মরুদ্যানে পরিণত করেন, নিতান্ত হেলায় কেটে যাওয়া জীবন অন্যের জন্য অবলম্বন হয়ে ওঠে। আজ তেমনই একজনের কথা বলব শওকত আলি। প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তসীমায় পৌঁছেও যিনি প্রতিনিয়ত দেশের ভবিষ্যতকে গুছিয়ে যেতে চান, চারগাছকে জল দিয়ে মহীরুহে পরিণত করতে চান।

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?ছয় ভাইয়ের মধ্যে বড় শওকত, বাবা মাত্র ১৩০ টাকা মাস মাইনের কাজ করতেন। তা দিয়েই আটটি জঠরানল শান্ত হত তিরিশটা দিন ধরে। অনেক কষ্টে পড়াশোনার সুযোগ এলেও পেটের দায়ে তা প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়, সহদররা একে একে বই গুটিয়ে কাজে লেগে পড়ল। কেউবা এমনিই দিন কাটানো শুরু করল, তবে এতকিছুর মধ্যে সারসত্য বুঝেছিলেন শওকত, তাই দাঁত কামড়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। মাত্র ১১ বছর বসেই পরিবারের চাপে তাঁকে বিয়ে করতে হয়,তবেহার মানেননি ওই যুবক। পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। তুলজাপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও সসম্মানে বিএড উত্তীর্ণ যুবক শওকত শিক্ষকতার চাকরি খুঁজতে শুরু করেন, হায় অদৃষ্ট যেখানেই যান পড়াশোনার কারণে সম্মান পেলেও চাকরি হয় না। কারণ চাকরিদাতেদের তো টাকা লাগবে, নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে বেড়ে ওঠা শওকত এই অনুদান রূপী ঘুষ চাকরিদাতাদের দেবেন কোত্থেকে, একদল তো তাঁর কাছে ৫০হাজার টাকাই চেয়ে বসল। বিফল মনরথে ফিরে আসা শওকত বুঝে গিয়েছিলেন এই সমাজে বিদ্যায় নয়, টাকার অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু তিনি তো হার মানতে শেখেননি, তাই নিজের পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দিতে নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু করলেন।

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?শিশুপুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে পুণেয় চলে এলেন। সেখানেই ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করলেন, কাছের এক দর্জির দোকানে কাজ শেখা শুরু, শওকত যা করেন সেটা মন দিয়েই করতে চান। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না, তিনি টেলরিং মাস্টার হয়ে উঠলেন। কর্মদক্ষতার কারণে খুব অল্পদিনেই বাড়ি করে ফেললেন, নিজের দোকান হল। তবুওশিক্ষক মনন তাঁকে নাড়া দিতে থাকে, ছেলের স্কুলে গিয়েই প্রস্তাবটা পাড়লেন। সকালে এখানে বিনা পয়সায় পড়াতে চান, কর্তৃপক্ষও রাজি হয়ে গেলে কাজ শুরু হল। মাস ছয়েকের মধ্যেই শওকত আলির দক্ষতায় মুগ্ধ শিক্ষকরা তাঁকে স্থানীয় ভোর তালুকে পাঠিয়ে দিলেন। পাহাড়ি অঞ্চলে পাঁচটি গ্রামের একটিই মাত্র স্কুল। সেকুল তো নয়,জরাজীর্ণ বাড়ি চালের টিন ফুটো হয়ে জল পড়ছে। আদিবাসী অধ্যুষিত ভোর এলকার ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে এমন একটি স্কুলকে সুগঠিত করবেন কীভাবে ভেবে পান না তিনি।

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?প্রথমে স্বেচ্ছাসেবীদের অনুদানে আটটি কক্ষ সমেত নতুন স্কুল বাড়ি তৈরি করলেন। যেখানে শৌচালয় থেকে ল্যাবরেটরি সবই ছিল। বাড় বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের শিক্ষার গুরিত্ব বুঝিয়ে স্কুলে পড়ুয়া আনলেন শওকত আলি।এবার শূন্য ছাত্রসংখ্যা থেকে বেড়ে হল ৫১জন। যার মধ্যে ১০জন ছাত্রী। পাহাড়ি রাস্তা দুর্গম,তায় যানবাহন নেই। দূর দূর থেকে পড়ুয়ারা বর্ষাকালে আসবে কী করে, তাই তাঁর চেষ্টায় স্কুল বাস হল।

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ে পড়ুয়াদের নিয়ে ও দিয়ে আসে সেই বাস। এভাবেই চলছে স্কুল, পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের অভিভাবিকাদের টেলারিংয়ের কাজও শেখান তিনি। যাতে আয়ের পথ সুনিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে পড়ুয়াদের শেখানো হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। দিনে স্কুল আর রাতে সেলাই করেন টেলারিং মাস্টার শওকত আলি, যিনি নবভারতের শিকড় তৈরি করছেন ধীরে ধীরে। তাঁকে তো স্যালুট জানাতেই হয়।

খিদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই মানুষটি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =