শাম্মী হুদা: আমীর খানের জনপ্রিয় ছবি ‘তারে জমিন পর’- এর কথা নিশ্চই মনে আছে। ছবিতে ইশান্ত নন্দকিশোর অবস্তি নামের সেই ছোট্ট ছেলেটি যার চোখের সামনে সমস্ত অক্ষর নেচে বেড়ায়। ব্ল্যাকবোর্ড হোক বা বই। অভিভাবকদের ধারণা ছিল, ইশান্ত পড়তে পছন্দ করে না, তাই ভুলভাল বলে। পরে জানা যায় বিষয়টি সত্যি, ওই খুদে ডিস্লেক্সিয়া নামের এক বিরল রোগে আক্রান্ত। তাই তার চোখের সামনে অক্ষর রা নাচে, পড়তে অসুবিধা হয়। তবে নিকুম্ভ স্যারের বদান্যতায় নতুন জিবন ফিরে পায় ওই কিশোর, বাকিটা সকলেরই জানা। আজ এমনই একজনের কথা বলব যিনি অটিজমের থাবা থেকে নিজেকে বাঁচাতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। সেই পরিশ্রমের ফসল পেলেন চলতি মাসের পাঁচ তারিখে। ২০১৮- র ক্যাট পরীক্ষায় ৯৯.৯৭শতাংশ নম্বর পেয়ে সমাজের উন্নাসিক দের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন। ২৬ বছরের ওই যুবকের নাম মিহির কাপসে।
মিহির এই মুহূর্তে একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। প্রযুক্তিবিদ মিহিরকে এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কত না বিপত্তি সইতে হয়েছে। একদম শৈশবে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ডিস্লেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত মিহির। তবে পরবর্তীতে জানা যায় অটিজমে আক্রান্ত মিহির। এরপর স্কুলে ভর্তি করতে প্রচুর সমস্যা পোহাতে হয়েছে ওই যুবকের পরিবারের। স্কুলের টিচাররা আর পাঁচটি ছেলে মেয়ের মতো এই ক্ষুদে কে স্কুলে নিতে চাননি মিহিরের বাবাকে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে সবাই কানাঘুষো করত বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুদের স্কুলে অনেক কষ্টে মিহিরকে ভর্তি করা হয়। এর পরের দিন গুলি বড় যন্ত্রণায় কাটিয়েছেন শ্রীমতি কাপসে। তবুও ছেলের জন্য লড়ে গেছেন ছেলেকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করতে কি না করেছেন তিনি। মায়ের একান্ত বাধ্য মিহির মন দিয়ে পড়াশোনা করেছেন সমস্ত বাধা কাটিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ সফল হন তিনি। চাকরি ও পেয়েছেন একটি ভাল সংস্থায়। তারপরেও লক্ষ্যমাত্রায় থেমে যাননি ফের নতুন করে শুরু করেছেন। সর্বভারতীয় ক্যাট পরীক্ষায় এবারে তিনি সব থেকে বেশি শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৯৯.৯৭ %। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কাছে বড় অনুপ্রেরণা মিহির। আগামী দিনে তিনি আরও সাফল্যের মুখ দেখুন একই সঙ্গে সমাজের বিশুদ্ধতা বাদীদের মুখে যোগ্য জবাব দিন, এটাই কাম্য।
মিহিরকে দেখে অন্তত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের আরও পরিণত করুন। অটিজম কি তানিয়ে পড়াশোনা করে এইসব শিশুদের আপন করে নিন। তাহলে অনেক দুশ্চিন্তা গ্রস্ত বাবা মা তাঁদের হতভাগ্য সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে আতঙ্কিত হবেন না।