রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রাম

শাম্মী হুদা: স্বদেশ সিনেমার শাহরুখ খানকে মনে আছে? আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয় ইঞ্জিনিয়র নিজের গ্রামকে সুজলা সুফলা করতে মাঠে নেমে জলাধার তৈরি করছেন। এবার বাস্তবের শাহরুখকে দেখুন, নাহ ইনি মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার হলগড় গ্রামের নায়ক হলেও নিজে কিন্তু একজন পোড় খাওয়া ইঞ্জিনিয়র। নাম দত্তা পাটিল। যিনি মাস গেলে বিরাট বড় মাপের অ্যামাউন্টের বেতন পান। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার

রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রাম

শাম্মী হুদা: স্বদেশ সিনেমার শাহরুখ খানকে মনে আছে? আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয় ইঞ্জিনিয়র নিজের গ্রামকে সুজলা সুফলা করতে মাঠে নেমে জলাধার তৈরি করছেন। এবার বাস্তবের শাহরুখকে দেখুন, নাহ ইনি মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার হলগড় গ্রামের নায়ক হলেও নিজে কিন্তু একজন পোড় খাওয়া ইঞ্জিনিয়র। নাম দত্তা পাটিল। যিনি মাস গেলে বিরাট বড় মাপের অ্যামাউন্টের বেতন পান। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্লারা শহরের বাসিন্দা দত্তা ইউএস-বেস ইয়াহুর ইঞ্জিনিয়র।তিনি মাত্র তিন বছরেই রুখাসুখা হলগড়কে সবুজায়নে ভরিয়ে দিয়েছেন।

সুপ্রতিষ্ঠিতহওয়ার পর হলগড়ে থাকা তাঁর পরিবারকে লাতুরে সেটলড করে দেন দত্তা। তিনি বছরে একবার দেশে এসে বাবা-মা আত্মীয় স্বজনকে গ্রামের তীর্থ দর্শনে নিয়ে যেতেন।বছর চারেক আগে একবার এই রকম তীর্থ দর্শনে বেরিয়ে অবাক হন তিনি।নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি থেকে খাবার ও জল নিয়ে বেরোতে হবে,তীর্থ দর্শনের পর কোনও গাছের তলায় বিশ্রাম নিয়ে খাওয়াদাওয়া সারতে হবে। সেদিন সবকিছু নিয়ম মাফিক করলেও পানাহারের জন্য কোনও ছায় সুশীতল জায়গা খুঁজে পাননি দত্তা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এনিয়ে তাঁর বাবা বলেন, গোটা হলগড়ের ছবিই এক। গাছপালা জল না পেয়ে শুকিয়ে মরে গিয়েছে, চাষের খেত ফুটিফাটা, তাইতো এভাবে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। গোটা পথআর একটাও কথা বলেননি দত্তা।

রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রামসেবার ক্যালিফোর্নিয়া ফিরেই গবেষণা শুরু করেন।ক্যালিফোর্নিয়াও খরাপ্রবণ এলাকা।বছরে মাত্র ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবুও বাথটবে স্নান থেকে শুরু করে কৃত্রিম ঝর্না বা সুইমিং পুল কোনও বিলাসিতাই বন্ধ থাকে না। সেখানে হলগড়ে বছরে ৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে কেন সেখানে জলের আকাল, খরায়প্রাণ অতিষ্ঠহয়।তাঁর গ্রামের ভৌগোলিকগতিবিধি দেখে দত্তা জানতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়ায় মাটির জলস্তর ৭০ ফুটনিচে আর হলগড়ে ৮০০ ফুট নিচে। এবার অন্যান্য ইঞ্জিনিয়র ও গবেষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি।কীভাবে হলগড়ের মাটির নিচের জলস্তরের দূরত্ব কমানো যায়তানিয়ে শুরু হয় পড়াশোনা। ২০১৬-তে তিন লক্ষ টাকা লগ্নি করে নিজেদের দু একর জমিতে তিনি কৃত্রিম জলাধার তৈরিরকাজ শুরু করেন। অনেক বাধা বিপত্তি হতাশ এলেও পিছনে তাকাননি গ্রামের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।তাঁরকথায়গ্রাম থেকেই অনুদান উঠেছে একলপ্তে পাঁচলক্ষ টাকা।পাশাপাশি প্রত্যেক বাসিন্দা জলাধার তৈরিতে দিন দুঘণ্টা করে শ্রম দান করেছেন।মহারাষ্ট্রের সিনেমা হলগুলিতে হলগড় বাসীর উদ্দেশে ঘোষণা হয়েছে তাঁরা যেন জলাধার তৈরিতে হাত লাগান।পাশপাশি বৃষ্টির জল ধরে রাখতে কাজ করেন।

রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রামদেশে বিদেশে যখনই কোনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন নিজের গ্রামের দূরবস্থার কথা ব্যক্ত করেছেন সেখানে।কোনও জায়গা থেকেই তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি।দত্তার নিজের প্রকল্পের খবর পেয়ে ইয়াহু তাঁকে তিন বছরে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। নিজে এখনও পর্যন্ত ২২ লক্ষ টাকা এই সেচ প্রকল্পে খরচ করেছেন। ক্যানেল তৈরি করে বৃষ্টির জল ধরে রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫০০ হেক্টর কৃষিজমিতে তৈরি হয়েছে এই জলাধার। এমনভাবে তার গঠন, যাতে নদীর জল উপচে সেখানেই পড়ে, তবে তা খুব ধীরে। কেননা এই জল ধীর বেগে বইলে চুঁইয়ে চুঁইয়ে মাটির গভীরে ঢুকবে ধীরে ধীরে জলস্তরের দূরত্ব কমবে। বৃষ্টির একটা ফোটাও যাতে নষ্ট না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছিলেন দত্তা, গ্রামের মানুষ কথা রেখেছে। এখন স্যাটেলাইটে হলগড়কে দেখলে তিন বছর আগের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া কষ্টের হবে। সবুজে ঢেকেছে গোটা এলাকা।গত দুবছর বৃষ্টিও বেশি হয়েছে।চাষিদের রোজগার বেড়েছে, দুঃখ দুর্দশা ঘুচেছে। দেশের মডেল গ্রাম হয়ে উঠেছে লাতুরের হলগড়, যার পুরো কৃতিত্ব গ্রামের কৃতি সন্তান দত্তা পাটিলের।

রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রামদত্তা অনেক কষ্টকরে বড়হয়েছেন।তাঁদের দুই ভাইকে কাল্স ফোর পর্যন্ত লেখাপড়া জানা মা কোনও দিন স্কুল কামাই করে খেতে কাজ করতে পাঠাননি। উলটে বলেছেন, দারিদ্রের বেড়াজাল কেটে বেরোতে হলে একটাই অস্ত্র লেখাপড়া,তাই সেটি মন দিয়ে করো। মা বাবা প্রান্তিক চাষী ছিলেন। যা নুনভাত খাওয়াতেন, তাই সোনামুখ করে খেয়ে নিত দুই ভাই। মাধ্যমিকেগ্রামের স্কুল থেকে ফার্স্ট হয়ে সকলের নজর কেড়ে নেন দত্তা।শহরের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে দ্বাদশ স্থান দখল করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু।প্রথমে কম্পিউটার দেখে ভয় পেয়েছিলেন। শিক্ষক যখন সবাইকে ইমেল খুলতে বলছেন নিজেদের পাসওয়ার্ড আইডি দিয়ে।তখন ঠায় বসেছিলেন দত্তা, সেতো এর আগে স্বচক্ষে কখনও কম্পিউটারই দেখেনি। তারউপর গ্রামের স্কুলে পড়েছে।

রিয়েল লাইফে স্বদেশ, প্রবাসী ইঞ্জিনিয়রের উদ্যোগে ২০০ কোটি লিটার জল বাঁচাচ্ছে এই গ্রামইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। প্রথম একমাস চুপ করে থাকত, পাছে কথা বলতে গেলে তার দুর্বলতা সবাই যেনে যায়। ওই একমাস সময়কালকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল দত্তা। এরপর ইউনিট টেস্টের ফলাফল বেরোলে দেখা যায় ফার্স্ট হয়েছে সে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পাঁচ বছর হয়ে গেল আমেরিকাতে বসবাস করছেন, মাইক্রোসফটের মতো সংস্থায় কাজ করার পর এখন তিনি ইয়াহুর ডিরেক্টর। শুধু তাই নয় ভারতীয় আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর একজন রূপকারও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =