কলকাতা: ইঙ্গিত আগেই ছিল৷ ছিল আশঙ্কা৷ এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবছরের জন্য সমস্ত পরীক্ষা বাতিল বলে ঘোষণা করল ICSE বোর্ড৷ দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির সমস্ত পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা সিবিএসই৷ আজ এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷ আগামীকা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে বলে খবর৷ উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা হওয়া, না-হওয়ার দোলাচলের মধ্যে এবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাল শিক্ষক সংগঠন৷ পরীক্ষা না পিছিয়ে কীভাবে তা করা যাতে পারে, বিস্তারিত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷
শিক্ষক সংগঠনের তরফে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, পরীক্ষার সময় দশটা থেকে শুরু করার বদলে ১২টা থেকে ৩টে ১৫ পর্যন্ত করা যাতে পারে৷ তা না হলে পরিক্ষার্থী ও পরিদর্শকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেহেতু এখনও গণপরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল হয়নি৷ করোনার সংক্রান্ত চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো, পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ আগে যে পরীক্ষা কেন্দ্রে যত পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেই সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনে পরীক্ষা নেওয়া যাতে পারে বলেও জানানো হয়েছে মতামত৷ পাশাপাশি বিকল্প কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করারও আর্জি জানানো হয়েছে৷
শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রের পরীক্ষা গৃহে একটি বেঞ্চে দু’জন পরীক্ষার্থীকে বসাতে হবে৷ পরের বেঞ্চ ফাঁকা রাখে নেওয়া যেতে পারে পরীক্ষা৷ স্বাভাবিকভাবেই একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে যতজন পরীক্ষার্থী আগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫০% পরীক্ষার্থী যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও আর্জি জানানো হয়েছে৷ পরীক্ষার্থী ও পরিদর্শকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত যানবাহণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে রাখারও দাবি তোলা হয়েছে শিক্ষক সংগঠনের তরফে৷ আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরিদর্শকের অভাব যাতে না হয়, তার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের দু’তিন কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, যাঁরা হয়তো অন্য বিদ্যালয়ে কর্মরত, তাঁদের পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ ডিআই দফতরগুলিকে দিতে হবে বলেও তোলা হয়েছে দাবি৷ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি উপযুক্তভাবে সানিটাইজ করার এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে৷
আজ দেশের শীর্ষ আদালতে পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানিয়ে মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ICSE বোর্ড এবছর পরীক্ষা বাতিল করছে৷ পরে নেওয়া হবে না কোনও পরীক্ষা৷ তবে, ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে কি না, আগামীকাল এই বিষয়ে মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে৷ তখন বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে৷
অন্যদিকে, CBSE-র তরফে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে৷ পরিস্থিতি উপযুক্ত হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও সুপ্রিম কোর্টের জানিয়েছে কেন্দ্র৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ আজ মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এমনই দাবি করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷
সর্বভারতীয় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কী হবে? তা নিয়ে বাড়ছে জল্পনা৷ কেননা এর আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বিষয়টি সর্বভারতীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি রেখে পর্যালোচনা করা হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ সূত্রের খবর, দুটি কেন্দ্রীয় বোর্ডের সুপারিশ খতিয়ে দেখার পর আদালতের রায়ের কপি দেখে দু’এক দিনের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে৷ তবে, এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার প্রবল সম্ভবনা তৈরি হয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি৷ পরীক্ষার প্রস্তুতি রেখে চলেছে পর্যালোচনা৷