পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক কম, ধুঁকছে বাংলার স্কুল

আজ বিকেল: উঁচু ক্লাসে শিক্ষক নিয়োগ শেষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের উদ্বেগজনক ছবি উঠে আসছে ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষের সর্বশিক্ষার রিপোর্টে। মালদহ, জলপাইগুড়ি এবং ঝাড়গ্রাম-এই তিন জেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত খারাপ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এ থেকে স্পষ্ট, এসএসসি’র মাধ্যমে নিয়মিত নিয়োগ না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। গত বছরের

পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক কম, ধুঁকছে বাংলার স্কুল

আজ বিকেল:  উঁচু ক্লাসে শিক্ষক নিয়োগ শেষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের উদ্বেগজনক ছবি উঠে আসছে ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষের সর্বশিক্ষার রিপোর্টে। মালদহ, জলপাইগুড়ি এবং ঝাড়গ্রাম-এই তিন জেলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত খারাপ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।

এ থেকে স্পষ্ট, এসএসসি’র মাধ্যমে নিয়মিত নিয়োগ না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। গত বছরের শেষ দিকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে যে নিয়োগ হয়েছে, তার ভিত্তি ছিল ২০১৭-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসেব হওয়া শূন্যপদ। তারপর যে শূন্যপদগুলি সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনও পূরণ হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি সেগুলি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। মামলা-মোকদ্দমা মিটিয়ে নিয়োগে গতি আনার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। সেটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু এসএসসি’র এসএলএসটি আরও নিয়মিত করতে হবে বলেই মনে করছে শিক্ষামহল।

একইসঙ্গে, উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলিতে, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে যোগ্য শিক্ষক প্রার্থী না পাওয়াও পদ পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আরও একটি ব্যাপার রয়েছে। চাহিদার নিরিখেই বহু মাধ্যমিক স্কুলকে একলপ্তে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার দেখে নেওয়া যাক, ছবিটা কেন উদ্বেগজনক। শিক্ষার অধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রতি ৪০ জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু রাজ্যের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত সেখানে ১:৫৯.২৪। অর্থাৎ, প্রায় ৬০ জন পড়ুয়া পিছু রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। কিন্তু এর চেয়ে আরও অনেক ভয়ঙ্কর ছবি রয়েছে। মালদহে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪.৫৩ জন পড়ুয়া পিছু রয়েছেন একজন শিক্ষক। জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে সেই অনুপাত ১:৯২.৩৮। ঝাড়গ্রামের অনুপাত ১:৮৮.২৩। এই অনুপাত বেশ খারাপ মুর্শিদাবাদ (১:৮১.৬৫), নদীয়া (১:৭৫.০৫) এবং আলিপুরদুয়ারে (১:৭২.৮৬)। দার্জিলিং (১:৩৫.১৬) বাদ দিলে সবচেয়ে ভালো অনুপাত কলকাতায়। এখানে ৩৬.৪৬ জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক রয়েছেন। অর্থাৎ, পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক বাড়তি। এই ছবিটা খুবই প্রত্যাশিত। কারণ, শিক্ষকরা চান শহর কলকাতায় থাকতে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিতে।

অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ফলে শহরে বাংলা মাধ্যমের সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রী কমছে। বেশিরভাগই ছুটছে বেসরকারি নামী বা অনামী স্কুলে। সেখানে পড়াশোনার মান যাই হোক, ইংরেজিতে সড়গড় হওয়া যায়। এই টানেই সেখানে ছুটে যাচ্ছে সবাই। তবে, ছবিটা অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে। তাতে রাজ্যের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১:৪২.৬৫। কলকাতার ছবিটা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। মাধ্যমিক স্তরে ২৪.০৩ জন পড়ুয়াপিছু একজন শিক্ষক রয়েছেন। এই অনুপাত প্রাথমিক স্তরের চেয়েও ভালে। মুর্শিদাবাদে ৫৯.৬২ শতাংশ পড়ুয়া পিছু রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। অনেকেই মনে করছেন, সারপ্লাস ট্রান্সফার যদি সরকার স্বচ্ছভাবে করতে পারে, তাহলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই বৈষম্য যতদিন থাকবে, ততদিন শিক্ষাব্যবস্থার কোনও উন্নতি সম্ভব নয়। প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকে এই অনুপাত যথাক্রমে ১:২০.৩৩ এবং ১:৪১.৩৪। অর্থাৎ, প্রাথমিকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, এই অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *