প্রধান শিক্ষককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ‘শাস্তি’, শিক্ষাই কি শিক্ষার পরিপন্থী?

পুরুলিয়া: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম৷ এই মৌলিক অধিকারগুলিকে সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে সুষ্ঠ ও পরিকল্পিতভাবে ভাবে পৌঁছে দিতে, সরকারি প্রচষ্টা যেমন আছে তেমনই আছে বিস্তর অভিযোগ৷ আর এই অভিযোগের জেরেই গ্রামের মানুষের হাতে হেনস্থা হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিলোই৷ এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গল গ্রামবাসীর নিজেরাই হাতে তুলে

প্রধান শিক্ষককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ‘শাস্তি’, শিক্ষাই কি শিক্ষার পরিপন্থী?

পুরুলিয়া: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম৷ এই মৌলিক অধিকারগুলিকে সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে সুষ্ঠ ও পরিকল্পিতভাবে ভাবে পৌঁছে দিতে, সরকারি প্রচষ্টা যেমন আছে তেমনই আছে বিস্তর অভিযোগ৷ আর এই অভিযোগের জেরেই গ্রামের মানুষের হাতে হেনস্থা হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিলোই৷ এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গল গ্রামবাসীর নিজেরাই হাতে তুলে নিলেন আইন৷ বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখলেন ঝালদার পুস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে৷

স্থানীয় থেকে জেলা শিক্ষা দপ্তর, সব জায়গায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের পাহাড় জমেছে৷ শাস্তি স্বরূপ তিন তিন বার একাধিক জায়গায় বদলির পরেও কোনও পরিবর্তন আসেনি৷ একজন প্রাক্তণ শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্বে অবহেলা যেন তার অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল৷ এবছরই পুস্তির ওই স্কুলে বদলি হয়ে এসেছেন৷ কিন্তু তার পর থেকেই প্রথমে স্কুলে সময়মতো না আসা, মিড ডে মিলের অনিয়ম সহ একের পর এক অভিযোগ৷

এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ প্রধানশিক্ষকের গাফিলতির খেসারত দিতে হয়েছিল স্কুলের সব শিক্ষককে গ্রামবাসীরা সবাইকে তালাবন্দি করেছিলেন৷ এরপর ওই স্কুলে প্রায় সপ্তাহখানেক তালাবন্ধ ছিল৷ ক্লাস নেওয়া হত স্থানীয় এক দুর্গামন্দিরে৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিডিও, এসডিও-রা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ সবার সামনে নিজের দোষ কবুল করে মুচলেকা দেন ওই প্রধান শিক্ষক৷ তারপরেই গ্রামবাসীরা স্কুলের তালা খোলে৷ এর কয়েক মাস পরেই আবারও অসন্তোষ তৈরি হয়৷

মিড-ডে মিলে সরকারি বরাদ্দের খাবার না দিয়ে মুড়ি, চানাচুর দেওয়া হয় পড়ুয়াদের৷ ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ফের অভিযোগ জানায়৷ সেইসময় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক গিয়ে সমস্যা মেটান৷ স্কুল সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি হয়৷ কিন্তু তাতে আশ্বস্থ হতে পারেনি গ্রামবাসীরা ক্ষোভ এতটাই জমছিল যে সোমবার প্রধানশিক্ষককে স্কুলে এলে তাকে নজিরবিহীন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়৷ তাঁকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলে গ্রামবাসীরা৷ যদিও এই ঘটনার জন্য গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন৷

স্যোশাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয় শিক্ষককে বেঁধে রাখার দৃশ্য৷ এই ঘটনাকে বর্বরতা বলেছেন অনেকেই৷ কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রক্ষকের ভক্ষকের ভূমিকা তো নতুন কিছু নয়৷ বিশেষত গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় শিক্ষা, পরিষেবা প্রদানের পরিবর্তে শিক্ষকদের মধ্যেই যদি অশিক্ষানীয় চরিত্র ফুটে ওঠে তা শিক্ষাঙ্গনগুলির যথার্থতা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − ten =