কলকাতা: করোনা আক্রমণে টানা ছুটি চলছে স্কুল, কলেজগুলিতে। কিন্তু এই ছুটিতেও থেমে থাকেননি রাজ্যের শিক্ষকদের এক বিরাট অংশ। করোনার পাশাপাশি আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছেন তারা। অনেকেই তাদের মধ্যে ত্রাণ বিলিও করেছেন অতিমারির সময়ে। শিক্ষারত্ন প্রদানের নিয়ম জারি করেছে রাজ্য সরকার, আর তাতেই প্রথম পর্বের বাছাইয়েই এক বিরাট অংশের শিক্ষকদের নাম বাদ পড়েছে। নিয়মানুযায়ী, ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তবেই শিক্ষারত্ন দেওয়া হবে। ফলে সেবামূলক কাজে ছুটে যাওয়া শিক্ষকদের ৯৯ শতাংশের এই ২০ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁরা তালিকা থেকে বাতিল হয়েছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের শিক্ষক চন্দন মাইতি এক সময় সুন্দরবনে ত্রাণ বিলি করেছেন। অতিমারিতে যে সমস্ত তরুণ শিক্ষকরা ত্রাণ বিলি করেছেন, তাদের বয়সের কারণে এই শিক্ষারত্নের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত হয়নি বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেছেন, 'শিক্ষারত্ন পেতে গেলে যদি শিক্ষকদেরই নিজেদের নাম পাঠাতে হয়, তাহলে সেটা অপমানজনক। আমি সেই কারণেই পুরষ্কারের জন্য আবেদন করিনি। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত অঞ্চল থেকে শিক্ষকদের কাজ দেখে নাম পাঠানো।’
এদিকে শিক্ষারত্ন পুরস্কারের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার তথা স্কুল শিক্ষা দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা দেবাশিস সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নোটিশে যা বলা হয়েছে সেই মতোই ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের অনলাইনে নিজেদের আবেদন করতে হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা একাধিক স্কুলের কমবয়সি এমন শিক্ষকরা আছেন, যাঁরা অতিমারি এবং আমফানে একাধিক জায়গায় ত্রাণ বিলি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘পুরস্কারের লোভে আমরা ত্রাণ বিলি করিনি, আমরা তো বেতন পাই। কিন্তু যাঁরা নিজেরাই দুঃস্থ অথচ না খেতে পাওয়া, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরসেবা করেছেন, সরকারের উচিত তাঁদের পুরস্কৃত করা।’ এ প্রসঙ্গে শিক্ষক রত্নদীপ জানিয়েছেন, খেজুরিতে শুভঙ্কর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি আছেন যিনি নিজেই শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী কিন্তু তিনি মানুষের কাছে রীতিমতো ভিক্ষা করে ত্রাণ বিলি করেছেন।
স্কুলশিক্ষা কমিশনারের পাঠানো একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে এ বছর মোট ৪০ জনকে শিক্ষারত্ন প্রদান করা হবে। সেখানে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের আবেদনকারীদের ভেরিফিকেশন করে ১৯ আগস্ট তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন শিক্ষারত্ন প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হবে। যদিও শিক্ষারত্ন প্রদানের বয়সের এই মাপকাঠি নিয়ে দফতরের কোনও কর্তাই মুখ খুলতে চাননি।