‘খুলছে না স্কুল’! ভুয়ো খবরে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি! পড়ুন, ঠিক কী বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী?

‘খুলছে না স্কুল’! ভুয়ো খবরে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি! পড়ুন, ঠিক কী বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী?

কলকাতা: আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে খুলছে সমস্ত স্কুল। প্রাথমিক পর্বে পঠন-পাঠন শুরু হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলার একটি জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল দাবি করেছে, ‘এখনই স্কুল-কলেজ খুলছে না’! যা একবর্ণও সত্যি নয়! জনপ্রিয় নিউজ পোর্টালের খবরে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি৷ কিন্তু, জানেন কি আদতে আজ ঠিক কী বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী?

করোনা মহামারীর জেরে গত মার্চ মাস থেকে দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। তবে একটানা স্কুল বন্ধ থাকার জন্য ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। লাগাতার অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছে অন্যান্য শ্রেণির পড়ুয়ারা৷ দীর্ঘদিন বন্ধুদের সাথে দেখা না হওয়ায় মুষড়ে পড়ছে কচিকাঁচারাও।

গত কয়েক মাস ধরেই দেশের করোনার গ্রাফ ক্রমেই নিম্নমুখী। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ। খুলছে একের পর এক অফিস-কাছারি, পর্যটন কেন্দ্র৷ খুলছে স্টোডিমায়৷ সচল হয়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা৷ চলছে রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ৷ শুধু বন্ধ স্কুল-কলেজে সশরীরে হাজির হয়ে পঠন-পাঠন। আর তাই বিগত মাস দুয়েক ধরেই অভিভাবকরা স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে আবেদন জানাচ্ছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছিলেন। বুধবার তিনি সরকারিভাবে জানিয়েছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল খুলে পঠন-পাঠন শুরু হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। 

কিন্তু বাংলার একটি নামজাদা নিউজ পোর্টাল দাবি করছে, স্কুল কলেজ খোলা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও কিছুই জানাননি। তাদের সাফ বক্তব্য, স্কুল খোলার দিন এখনও নির্দিষ্ট নয়। যদিও শিক্ষামন্ত্রী বা শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে সেরকম কিছুই জানানো হয়নি। তাদের এও মত, শিক্ষামন্ত্রী নাকি জানিয়েছেন আপাতত অনলাইনে ক্লাস চলবে। স্কুল খুলছে না। কিন্তু আজ শিক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,  এখনই খুলছে না রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়৷ আজ নিউটাউনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল৷  বলা হয়েছে, আপতত অনলাইনেই চলবে ক্লাস৷ তবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল খোলার ভাবনা চিন্তা রয়েছে রাজ্য সরকারের৷ কীভাবে স্কুল খোলা হবে, তা নিয়ে খুব দ্রুত বিজ্ঞপ্তি জারি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ তবে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলার কথা ভাবা হয়নি৷ স্কুল খুললেও হোস্টেল কোনও ভাবেই খোলা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ 

রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে কিনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী৷ ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখনই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে না৷ অনলাইন যেমন ক্লাস চলছিল, তেমনই ক্লাস চলবে৷ পরিস্থিতির নিরিখে স্কুল খুললেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এখনই চালু করা সম্ভব হচ্ছে না৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সরকারকে অনলাইন ক্লাস চালু রাখার প্রস্তাবই দিয়েছেন৷  তবে  গবেষকদের জন্য  কোভিড বিধি মেনে ল্যাবরেটরি খোলা হবে বলেও বৈঠকে স্থির হয়েছে। 

শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা করে কী ভাবে করা যায়৷ ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক ও অশিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে কী ভাবে পঠনপাঠন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও জানান, উপাচার্যরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা গ্রহণ করা হয়েছে৷ এর আগেও উপাচার্যরা জানিয়েছিলেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজোড় সংখ্যার সেমিস্টারগুলির (যেমন-প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ইত্যাদি) পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হবে৷ এদিনও একই সিদ্ধান্তে তাঁরা সিলমোহর দিয়েছেন৷ ৩১ মার্চের মধ্যে এই পরীক্ষা শেষ করা হবে৷

ভুয়ো খবর

প্রকাশিত প্রতিবেদন

কিন্তু কবে হবে জোড় সংখ্যার সেমিস্টার? এ বিষয়ে অভিভাবরাও জানতে চেয়েছেন৷ এপ্রিল মাসে নির্বাচন৷ ফলে কবে জোড় সংখ্যার সেমিস্টার হবে উপাচার্যরা নিজেরাই এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এই বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকারও৷ তিনি জানান, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বিষয়টিও তাঁদের দেখার কথা বলা হয়েছে৷ ছাত্রদের স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে৷  তবে এই মুহূর্তে উপাচার্যরা হোস্টেল খোলার পক্ষে নন৷ স্বাস্থ্য বিধি মেনে হোস্টেল খোলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন তাঁরা৷ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন না হলেও অফিস খোলা রয়েছে৷ যাতে পড়ুয়া বা অভিভাবকদের কোনও অসুবিধা না হয়৷ এদিন বৈঠকে সরস্বতী পুজো নিয়েও কথা হয়েছে৷ কী ভাবে পুজো করা হবে সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলির উপর নির্ভর করছে বলে জানা শিক্ষামন্ত্রী৷ তবে কোনও ভাবেই কোভিড বিধি লঙ্ঘন করা যাবে না বলে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে৷

এদিকে বিবেকানন্দ মেরিট কাম-মিশন স্কলারশিপের জন্য আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছিল গত বছর ৭ই অক্টোবর৷ সেই সময় বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে৷ ১৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে৷ এর পর আর আবেদন গ্রহণ করা হবে না৷ ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৩৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, আবেদন জমা নেওয়া বন্ধ হলে অর্থ দফতরের কাছে গিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হবে৷ তিনি বলেন, গত দশ বছরে রাজ্যে শিক্ষাখাতে প্রভুত ব্যয় বরাদ্দ বেড়েছে৷ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে৷ এর একটি রিভিউ প্রয়োজন৷ এছাড়াও কলেজগুলির অ্যাকাডেমিক এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অডিট হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ উচ্চশিক্ষা কাউন্সিবের তিনটি প্রস্তাবে নীতিগত ভাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − four =