কলকাতা: ইঙ্গিত ছিলই৷ সেই মতো আগামী ১২ ফেব্রুয়রি থেকে খুলতে চলেছে রাজ্যের স্কুল৷ সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে চলবে স্কুলের পঠনপাঠন৷ তবে এখনই সকল শ্রেণির ক্লাস শুরু হচ্ছে না৷ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ নীচু শ্রেণির ক্লাস কবে থেকে চালু করা হবে, সেই বিষয়ে অবশ্য এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ আজ স্কুল খোলার বিষয়ে শিক্ষা দফতরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোভিড মেনে চলবে পঠন-পাঠন৷ কিন্তু, করোনাকালে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্নতা৷ কিন্তু, ১১ মাস বন্ধ থাকা ক্লাসরুম খোলার পর করোনা বিধি মেনে কীভাবে হবে পঠন-পাঠন? ক্লাসরুমে জমে থাকা ধুলোবালি সাফ করবে কে? সাফাই কর্মী বা ঝাড়ুদার নাকি চক-ডাস্টার ছেড়ে ঝাঁটা ধরবেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা? কনোরাকালেও ক্লাসরুম পরিচ্ছন্ন রাখতে এখনও পর্যন্ত স্কুলে নেই কোনও সাফাই কর্মী বা ঝাড়ুদার পদ৷ অগত্যা, ১১ মাস পর স্কুল খুললেও শ্রেণিকক্ষ স্যানিটাইজ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ প্রশ্নের মুখে বেহাল রাজ্যের শিক্ষার পরিকাঠামো৷
করোনা রুখতে মাস্ক ও সাবানজল ব্যবহারের উপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ পরিচ্ছন্নতার উপর দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব৷ করোনাকালে পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও, স্কুলের ক্লাসরুম সাফ করবে কে? স্কুল খোলার বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই শিক্ষা মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ ১১ মাস পর পঠনপাঠন চালুর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলের নির্ধারিত সময়ে একটি করে ক্লাস নেওয়া হতে পারে৷ স্কুলের পরিকঠামোর উপর ভিত্তি করে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসকে দুই বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক ঘরে ভাগ করে দিতে হবে৷ ক্লাসে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং সহ কোভিড বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক৷ শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদেরও কোভিড মেনে চলতে হবে৷ স্কুল খোলার পর থিওরি ক্লাস ছাড়াও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নেওয়ার দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের৷ স্কুল খোলার আগে গোটা স্কুল ভালো ভাবে স্যানিটাইজ করতে হবে৷ স্কুল চলার সময় সমস্ত কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে৷ এই বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যেও সঠিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে বাংলায় নীল-সাদা বড়বড় স্কুলবাড়ি গড়ে উঠলেও থেকে গিয়েছে পরিকাঠামো সংক্রান্ত ত্রুটি৷ স্কুলবাড়ি গড়ে উঠলেও কোনও স্কুলেই নেই সাফাই কর্মী বা ঝাড়ুদারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ৷ তাহলে স্যানিটাইজ করে কীভাবে চালু হবে পঠনপাঠন?
এবিষয়ে বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল চালানোর জন্য যে জেনারেল গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকার অনুমোদিত বা পোষিত স্কুলগুলোতে যে পরিকাঠামো আছে তা দিয়ে এই গাইডলাইন মেনটেন করা খুবই কষ্টকর। আমাদের রাজ্যের স্কুলগুলি তে সাফাই কর্মী বা ঝাড়ুদার নেই। যার জন্য আমরা অনেকবছর ধরে স্থায়ী ঝাড়ুদার নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছি৷ স্কুল বিল্ডিং এর বিভিন্ন কক্ষ (অফিস, স্টাফরুম, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরী, শৌচাগার) বিভিন্ন ধাপে স্যানিটাইজেশনের কথা বলা হলেও এর জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা যোগানের কথা এই গাইডলাইনে কোথাও বলা নেই৷ ফলে স্কুল নিয়মিত স্কুল স্যানিটাইজেশন করার জন্য আলাদাকরে অর্থ বরাদ্দ করা ও সাফাইকর্মী বা ঝাড়ুদার নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’’
স্কুল খোলার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় ‘Reopening of schools’ কথাটিতে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। বিদ্যালয় তো খোলাই রয়েছে। সমস্ত অফিশিয়াল কাজকর্ম প্রতিদিন চলছে৷ কেবল পঠন পাঠনের কাজ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীগণ প্রধান শিক্ষকের রোস্টার অনুযায়ী প্রতিদিন বিদ্যালয় যাচ্ছেন৷ বিদ্যালয় খোলার পরিবর্তে পঠন-পাঠন শুরুর কথা নির্দেশিকায় বলা উচিত ছিল৷ নির্দেশিকা জারি করে MAY BE, CAN BE, COULD BE কথাগুলির মানে কি? এতে বিভ্রান্তি ছড়াবে। নির্দেশিকা স্পষ্টভাবে আসা দরকার৷’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সরকারের কাছে আবেদন করছি, যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার জন্য প্রতিটি জেলার প্রতিটি রুটে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করা হোক৷ এখনও পর্যন্ত ভিন্ন জেলায় বহু ট্রেন বাতিল অবস্থায় রয়েছে৷ এর ফলে দূর-দূরান্ত থেকে যাঁরা যাতায়াত করেন তাঁরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হবেন৷’’