কলকাতা: রাজ্যের শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগ পদ্ধতিতে বড়সড় রদবদল হতে যাচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সচ্ছতা আনতে, দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে এবং সর্বোপরি সরলীকরণ করার ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য। নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ শিক্ষকদের পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মবিধি ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র পেয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভায়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে নিয়োগের আবেদন, গোটা প্রক্রিয়াটাই সম্পন্ন হবে অনলাইনে। স্কুলগুলি শূন্যপদের বিষয়েও এসআই মারফত না জানিয়ে সরাসরি অনলাইনে শিক্ষা দপ্তরে জানাবে। পুরো বিষয়টিতে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কোনও ভূমিকা থাকবে না।
নতুন নিয়মে অ্যাকাডেমিক স্কোর অর্থাৎ প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য বরাদ্দ নম্বর থাকছে না৷ স্কুল–বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভাল রেজাল্ট করে আসা কোনও প্রার্থী একটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষকতার মত পেশায় নিযুক্ত হবেন। সেখানে ফলাফল একটু খারাপ হলে তিনি সেই পেশার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। কিন্তু শিক্ষকতার মতো পেশায় প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানসম্মত মাপকাঠি। এতদিন সেই ফলাফলের ভিত্তিতে যে বিশেষ অগ্রাধিকার পাওয়া যেত তা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন। তাই এই মাপকাঠি তুলে নেওয়া হল স্কুলগুলি যোগ্যতর প্রার্থীদের হারাবে। সেক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছিল।
বিশেষত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নতুন পদ্ধতি প্রার্থীদের বহুদিনের দাবিগুলির কথা বিবেচনা করেই করা হয়েছে।আগে লিখিত পরীক্ষার বদলে শুধুমাত্র বেশি সময় কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হত৷ কিন্তু এক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রশ্ন ছিল প্রধান শিক্ষকের মতো সংবেদনশীল পদের জন্য শুধুমাত্র কর্ম–অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রার্থীবাছাই করার মত প্রক্রিয়া শুরু হলে অসন্তোষ বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বেশি মানেই তিনি স্কুল–পরিচালনার মতো কাজেও দক্ষতা দেখাতে পারবেন বহু ক্ষেত্রেই তা প্রমাণিত নয়। বরং পরিসংখ্যান বলছে, বিগত চারবারের পরীক্ষায় যাঁরা ভাল র্যাঙ্ক করেছেন তাঁরা অপেক্ষাকৃত কমবয়সী হলেও দক্ষতার সঙ্গে স্কুল সামলাচ্ছেন।
নতুন নিয়মে এই প্রধানশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলেই আবেদন করা যাবে। যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ হবে। পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। যেকোনো স্কুলে আবেদন করা যাবে। প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘প্রায়র পারমিশন’বা পূর্ব অনুমোদনের নিয়ম ছিল৷
প্রশ্ন উঠেছিল, কাজের অভিজ্ঞতার বিচারে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হলে সেক্ষেত্রে অনুমোদন কারা পাবে? এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে সমস্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার বা টিচার–ইন–চার্জরা কেনইবা পরীক্ষায় বসছেন না বা পরীক্ষায় বসে কেন প্রথম সারিতে র্যাঙ্ক করছেন না? এছাড়াও অন্যান্য উচ্চপদগুলিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, সেখানে অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়, সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষতাও সমানভাবে জরুরি। এরপরেও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে, সেক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পাওয়া উচিত স্কুলের টিচার ইনচার্জ বা অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারদের। তবে এক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন বা প্রায়র পারমিশনের উদ্যোগ সেই অর্থে লক্ষ্য করা যেত না।
নতুন নিয়মে সিনিয়রিটি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে থাকছে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে নিয়োগে অগ্রাধিকার। এতদিন স্নাতকোত্তরে ৫০ শতাংশ নম্বর না থাকলে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করা যেত না। সেই নিয়মেও খানিকটা বদল আসতে পারে। টিচার ইন-চার্জ পদে কাজ করলে বাড়তি নম্বর শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ সার্বিক মূল্যায়ন করেই তালিকা তৈরি হবে।
এছাড়া নতুন নিয়মে, শিক্ষক নিয়োগের জন্য কাউন্সিলিং প্রক্রিয়াও উঠে যাচ্ছে। তাই আগের মত সেন্ট্রাল কমিশনের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি করতে গিয়ে মাঝবয়সে বাড়ি থেকে বেশি দূরে পোস্টিং পেয়ে ঝামেলায় পড়তে হবেনা বা নতুন স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনিক চাপ, ম্যানেজমেন্ট কমিটি চাপ সহ্য করতে হবে না। সব মিলিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নতুন সম্ভব্য রদবদলের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষক মহল৷