দেশের নিরিখে সব থেকে পিছিয়ে বাংলার পড়ুয়ারা, রিপোর্ট কেন্দ্রের

কলকাতা: খেলাধুলো কিংবা শারীরশিক্ষা, দেশের নিরিখে বেশ পিছিয়ে রাজ্যের স্কুলগুলি৷ প্রত্যেক বিভাগে জাতীয় গড়ের চেয়ে ঢের নিচে বাংলা৷ শিক্ষক ঘাটতি থেকে স্কুলে খেলার মাঠের অভাবের জেরেই এই ফলাফল বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকশেন রিপোর্ট৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে গোটা দেশে ৫.৮ শতাংশ স্কুলে শারীরশিক্ষার শিক্ষক রয়েছেন৷ অন্যদিকে, উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলির মধ্যে

1d928c4eb40208c5247a0c8ef45dc203

দেশের নিরিখে সব থেকে পিছিয়ে বাংলার পড়ুয়ারা, রিপোর্ট কেন্দ্রের

কলকাতা: খেলাধুলো কিংবা শারীরশিক্ষা, দেশের নিরিখে বেশ পিছিয়ে রাজ্যের স্কুলগুলি৷ প্রত্যেক বিভাগে জাতীয় গড়ের চেয়ে ঢের নিচে বাংলা৷ শিক্ষক ঘাটতি থেকে স্কুলে খেলার মাঠের অভাবের জেরেই এই ফলাফল বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকশেন রিপোর্ট৷

রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে গোটা দেশে ৫.৮ শতাংশ স্কুলে শারীরশিক্ষার শিক্ষক রয়েছেন৷ অন্যদিকে, উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলির মধ্যে সেই হার ৩০.৮ শতাংশ৷ রাজ্যের কী অবস্থা? এখানে মাত্র ২.৮ শতাংশ স্কুলে শারীরশিক্ষার শিক্ষক রয়েছেন৷ যা গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ৷ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে হিমাচল প্রদেশেও একই অবস্থা৷ বাকি সব রাজ্যেই এই হার বেশি৷

রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬২.৭ শতাংশ স্কুলে খেলাধুলোর জন্য আলাদা পিরিয়ড রয়েছে৷ এই বিভাগে মহারাষ্ট্র শীর্ষে৷ ওই রাজ্যে ৯২ শতাংশ স্কুলে এমন ব্যবস্থা রয়েছে৷ এরপরই রয়েছে দক্ষিণ ভারতেরই দুই রাজ্য, কেরল ৮২.৮ শতাংশ এবং তামিলনাড়ু ৮২.২ শতাংশ৷  সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, দেশের মধ্যে প্রাথমিকের চেয়ে উচ্চ প্রাথমিকে পরিস্থিতি ভাল৷ প্রাথমিকে যেখানে ৫৮.৪ শতাংশ স্কুলে শারীরশিক্ষার জন্য পৃথক সময় দেওয়া হয়, সেখানে উচ্চ প্রাথমিকে সেই হার ৬৯.১ শতাংশ৷

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাজ্যের ৫৪.৩ শতাংশ স্কুলে অন্তত একটি খেলার সরঞ্জাম রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ অথচ, খেলার মাঠ রয়েছে মাত্র ৫৩ শতাংশ স্কুলে৷ অর্থাৎ, ৪৭ শতাংশ স্কুলে পড়ুয়ারা খেলাধুলোর জন্য কোনও মাঠ পায় না৷ জাতীয়স্তরে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে খেলার মাঠ রয়েছে যথাক্রমে ৬৫ এবং ৭০.৩ শতাংশের৷ ফলে জাতীয় গড়ের অনেকটাই নিচে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷

অন্যদিকে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৭ লক্ষের বেশি ছাত্র-ছাত্রী কমেছে উচ্চ প্রাথমিকে অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে। ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার এই প্রবণতা বেশি সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তফসিলি জাতি এবং অন্য অনগ্রসর শ্রেণির পরিবারগুলির মধ্যে। পড়ুয়া কমার প্রবণতা রয়েছে সাধারণ পরিবারেও। ছাত্র-ছাত্রী কমে যাওয়ার এই প্রবণতা স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য সরকারও। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরে জমা পড়া সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টে এই প্রবণতা তথ্য, পরিসংখ্যান সহ উপস্থাপন করা হয়েছে।

উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ের পর মাধ্যমিক। উচ্চ প্রাথমিক পর্যায় থেকেই মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, এমনই শিক্ষকদের বক্তব্য। সেই স্তরে ভর্তির সংখ্যা হ্রাস স্কুলছুটের বিষয়টিকে আরও জোরদার করছে। কতটা আশঙ্কাজনক অবস্থা, তার জন্য দু’টি জেলার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট জানাচ্ছে, উত্তর দিনাজপুর জেলার কোথাও কোথাও উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলছুটের হার ১৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। মালদহে এমন এলাকা পাওয়া গিয়েছে, যেখানে স্কুল ছেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী। ২০১৫-১৬ সালে ৬৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৬৬ জন পড়ুয়া ভর্তি হলেও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে হয়েছে ৫৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৪ জন। তফাত ৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭০২ জনের।

কেন কমছে ছাত্র-ছাত্রী? এর কারণ খোঁজারও চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, ২০১৭-র আগস্ট থেকে সমীক্ষা করার সময়ে দেখা গিয়েছে, কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয় অনেক পরিবারকে। মূলত বড় শহরের দিকেই সেই পরিযায়ী পরিবারগুলির যাত্রা। সেই পরিবারগুলির শিশু-কিশোররা হচ্ছে স্কুলছুট। এছাড়া শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, অপ্রতুল সংখ্যক শিক্ষক এর অন্যতম কারণ। স্বচ্ছল পরিবারগুলি ভরসা করতে পারছে না সরকারি স্কুলের উপর। প্রসঙ্গত, তৃণমূল সরকারে আসার পর দ্বিতীয় দফায় শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়মিত না হওয়ায় স্কুল বিমুখ হচ্ছে পড়ুয়ারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *