শাম্মী হুদা: দূষণে ঢেকেছে পৃথিবী, গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাব পড়ছে ভারতেও। এই সময় তাঁর উপস্থিতি বড়ই প্রয়োজনের,কিন্তু দিন ফুরিয়েছিল তাই চলে গেলেন বৃক্ষ মানব বিশ্বেশ্বর দত্ত সাকলানি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। স্বাধীনতা সংগ্রামী সাকলানির জন্ম ১৯২২ সালের ২জুন, উত্তরাখণ্ডের তেহরি গাঢ়ওয়াল জেলার সাকলানা উপত্যকায় জন্ম বিশ্বেশ্বর দত্তের। আট বছর বয়স থেকেই বৃক্ষ রোপণের কাজ শুরু করেন তিনি। এক কাকার কাছেই গাছের চারা তৈরির হাতে খড়ি হয় তাঁর। এরপর যত দিন গিয়েছে তত বেশি করে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তিনি। এদিকে গাঢ়োয়ালকে ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে রাখতে শুরু হল বিদ্রোহ, সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে শহিদ হলেন বিশ্বেশ্বরের দাদা নগেন্দ্র নাথ। এরপর গাছের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন সাকলানি।
১৯৮ সালে তাঁর প্রথম স্ত্রীর প্রয়াণে সব ছেড়েছুড়ে গাছ লাগানোয় মনোনিবেশ করলেন সাকলানি। তাঁর ৯৬ বছরের জীবনে তিনি ৫০ লক্ষ গাছ লাগিয়েছেন। তাঁর হাতেই সাকলানা উপত্যকা সবুজে ঢেকেছে। পেয়ারা, রডোডেনড্রনের মতো গাছ গাঢ়োয়ালকে সুন্দর করেছে। ১০০ হেক্টর জমিতেই একাই বৃক্ষ রোপণ করে গিয়েছেন।এই সব জমি বিশ্বেশ্বরদের ছিল না। প্রতিবেশীর জমিতে প্রথমে যখন তিনি গাছের চারা পুঁতলেন, তখন অনেকেই এর পিছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেল, ভাবল বিশ্বেশ্বর একদিন ওই জমি নিজের বলে দখল করে নেবেন। তবে ভুল ভাঙল অচিরেই, যখন সকলে দেখলেন বাছ বিচার নয়, যেকোনও জমিতেই গাছ লাগাচ্ছেন সাকলানি, এই গাছের চারা তৈরি করতে গিয়েই ধুলো কাদার কারণে বছর দশেক আগে দৃষ্টিশক্তি খোয়ালেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। তবুও নিজের কাজ থেকে সরে আসেননি। তিনি বলতেন, গাছ আমরা আত্মী, পরিজন, বন্ধু. পৃথিবী। তিনি গাছের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা দেখেছেন, তাই পৃথিবী দেখার কোনও ইচ্ছেই তাঁর নেই।
সাকলানির এই মহতী উদ্যোগের পুরস্কার স্বরূপ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৮৬ সালে তাঁকে ইন্দিরাগান্ধী প্রিয়দর্শিনী পুরস্কারে ভূষিত করেন। গত শুক্রবার এই মহান প্রাণের জীবনাবসান হয়েছে। এখন স্বামীর ইচ্ছে পূরণে উদ্যোগী হয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী ভগবতীদেবী। তিনি গ্রামের বাসিন্দাদের বোঝাচ্ছেন, তাঁর যেন গাছ বাঁচাতে উদ্যোগী হন।তাঁর স্বামীর রোপণ করে যাওয়া বৃক্ষরাজির দেখভাল করেন।