শাম্মী হুদা: সোশ্যাল মিডিয়া, বর্তমানে এর থেকে বেশি শক্তিধর কিছু নেই। কোনও কিছুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার বিষয় হোক বা উপকারের, সব কিছুতেই জনগণকে একত্রিত করতে পারে এই প্ল্যাটফর্ম। সময়মতো এই সার কথাটি বুঝেছিলেন বন্যা বিধ্বস্ত কেরালার আলাপ্পুঝা জেলার আইএএস অফিসার কৃষ্ণ তেজা। তিনিই এগিয়ে আসেন, নিজের উদ্যোগে বন্যা বিধ্বস্ত কেরালাকে ফের সোজা করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেন শুরু করেন, আই অ্যাম ফর আলেপ্পি। এই বার্তা শেয়ার হওয়ার ঘণ্টা ছয়েকের মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশে থেকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে প্রথম কল আসে। সেখানে বসবাসকারী মালায়লি মহিলা আটলক্ষ টাকা সাহায্যের জন্য পাঠাতে চান। স্থানীয় কুট্টানাড এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সংস্কারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
তেজার টিম এই বার্তায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এরপর যাঁরা সহযোগিতা করতে চান,তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পুনর্বাসনে হাত লাগানো হয়।এরপর আসে স্কুলের বাচ্চারা,প্রায় ৪০ হাজার পড়ুয়াকে নতুন পোশাক,ব্যাগ,বই খাতা পেনসিল,জ্যামিতি বক্স দেওয়ার পাশাপাশি স্কুল পুনর্বাসন শুরু হয়। নামী ব্যক্তিত্বরা এই বার্তা দেখে অঙ্গনওয়াড়ির দায়িত্বে এগিয়ে আসেন। পাঁচটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন তামিল অভিনেতা আল্লু অর্জুন। তাঁর দেখাদেখি বেশকিছু বসত বাড়ির পুনর্বাসনের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে বাহুবলী টিম। দেশ বিদেশথেকে সহযোগিতা র হাত বাড়িয়েছে মানুষ।
সাহায্য এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কাজে নেমে পড়ে তেজার টিম। তাঁরা বয়স্কদের জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরি করে। এমন ২০টি ক্যাম্প থেকে বিনামূল্যে দু’মাসের ওষুধ, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ও খাবার বয়স্কদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যেসব পরিবারে মহিলারাই কর্তা, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছে তেজার টিম। বিধবা ভাতার প্রকল্প চালু করার পাশাপাশি বাড়ির সংস্কার ও ওষুধ,খাবার দেওয়া হয়েছে। নামী ব্যক্তিত্বরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি সংস্কারে সাহায্য করছেন। একইভাবে বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় যেসব রোগ মহামারির আকার নেয় তা রুখতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সাহায্য আলাপ্পুঝা প্রত্যেকটি পঞ্চায়েতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তারপর স্থানীয় ১৩৩ জন পশু পালনকারীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রত্যেক খাটাল মালিককে অন্তঃসত্ত্বা গরু ও তাদের দুমাসের খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।সঙ্গে প্রত্যেক গবাদি পশুকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর কেরালার মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসনের দিকে নজর দিয়েছে আই অ্যাম ফর আলেপ্পি টিম। এই মৎস্যজীবীরাই সেই সব হিরো যাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে সর্বগ্রাসী বন্যার কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। যদিও তাঁদের বাড়িঘর পেশার যাবতীয় সামগ্রী সবই ভেসে গিয়েছে। এই মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে মাছধরার জাল ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
এরপর ভগ্নপ্রায় এলাকার পুনর্বাসন শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সফল কাজকর্ম ১০০ দিন ছাড়িয়ে গিয়েছে কয়েকদিন আগেই।তারপরও সহযোগিতা আসছে।কেরালাকে ফের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে অগুন্তি মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গোটা কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন ওই আইএএস আধিকারিক, যেকোনও প্রশংসাই তাঁর জন্য কম।