ওড়িশা: সুকুমার রায়ের ‘সৎ পাত্র’ ‘গঙ্গারাম’-এর সন্ধান পাওয়া গেল ওড়িশায়। ঢেঙ্কানালের বাসিন্দা ৬৫ বছরের ত্রিলোচন নায়েক অবশ্য অধ্যাবসায়ের বিচারে গঙ্গারামকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন। গঙ্গারাম যেখানে উনিশ বার ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ফেল করে শেষপর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন, সেখানে টানা বিয়াল্লিশ বার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন ত্রিলোচন। বারবার ব্যর্থ হয়েও কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হননি তিনি। অবশেষে বিয়াল্লিশতম পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে ছেড়েছেন। এক্ষেত্রেও তিনি গঙ্গারামের থেকে এগিয়ে৷ কারণ উনিশ বার পরীক্ষায় ফেল করে তিনি ক্ষান্ত দিলেও, ত্রিলোচন ৪২ বার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে ছেড়েছেন৷ এখানেই শেষ করেননি তাঁর পড়াশোনা৷ দ্বাদশ শ্রেণিতে এসেও ত্রিলোচনের ফেলের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। এবার অবশ্য মাত্র ১০ বার পরীক্ষা দিয়েই পাশ করেছিলেন ত্রিলোচন।
একের পর ব্যর্থতার পরও উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটতে পিছপা হননি অন্য ধাতুতে গড়া ত্রিলোচন। শিক্ষার অদম্য ইচ্ছের জোরে তিনি আজ সমাজে উচ্চশিক্ষার মানদণ্ডও অর্জন করেছেন। আইনের ডিগ্রি পেয়েছেন ত্রিলোচন। যদিও এর মধ্যে তাঁর জীবনের অনেক বসন্ত কেটে গিয়েছে৷ শেষ বয়সে ৬৫ বছরে পৌঁছে আইনের ডিগ্রি পেলেও, তাতেই খুশি বৃদ্ধ। শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জনই একজন ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ, এমনটাই মনে করেন ওড়িশার ত্রিলোচন নায়েক।
জানা গিয়েছে, ১৯৭২ সালে ঢেঙ্কানালের বানসিং হাইস্কুল থেকে প্রথমবার ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসেন পারিখেদা গ্রামের বাসিন্দা ত্রিলোচন নায়েক। ওই বছরই আবার সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায়ও বসেছিলেন তিনি। দু’টোতেই ব্যর্থ হন৷ তবুও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি৷ তাঁর সাফল্য পাওয়ার জেদ এবং ইচ্ছেশক্তির জোরে একের পর এক ব্যর্থতার পরও ১৯৯৩ সালে সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি৷ এরপর ১০ বার অদম্য চেষ্টা করে ঢেঙ্কানেল কলেজ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ও উত্তীর্ণ হন৷ এমনকি শিক্ষকরাও প্রতি বছর তাঁর ফর্ম ফিলাপ করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু তাতেও দমে যাননি ত্রিলোচন। কটকের শ্রী বিশ্বগুরু ল কলেজ থেকে আইনজীবীর ডিগ্রি পাওয়া ত্রিলোচনের পথচলা এখনও শেষ হয়নি। আগামী দিনে ঢেঙ্কানল আদালতে প্র্যাকটিস করতে চান বৃদ্ধ ত্রিলোচন।