হাতের লেখা ভালো হবে কীভাবে? আঙুলের ব্যায়াম করাবেন শিক্ষকরা!

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সিলেবাস আঙ্গুলের ব্যায়াম। খুদে পড়ুয়াদের হাতের লেখা ভালো করতে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অভিনব উদ্যোগ।

কলকাতা: পড়ুয়াদের হাতের লেখা দেখে মনের গতি-প্রকৃতি বলে দিতে পারেন গ্রাফোলজিস্ট বা হাতের লেখা বিশারদরা। কিন্তু তাদের হাতের লেখা বুঝতে পরাটাই যখন দুস্কর হয়ে ওঠে তখন ইচ্ছাশক্তি আর অনুশীলনের উপরেই জোর দিতে চান বিশেষজ্ঞরা। তবে এই লক্ষ্যে সম্পূর্ণ অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এখন থেকে খুদে পড়ুয়াদের হাতের লেখার মান উন্নত করতে প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখানো হবে আঙুলের ব্যায়াম।যা রাজ্যের সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলির মানোন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

দ্রুততার সঙ্গে সুন্দর হাতের লেখার অভ্যাস তৈরি করতে কোন ব্যায়াম করলে আঙুলের জড়তা কাটবে, লেখায় দ্রুততা আসবে তারই প্রশিক্ষণ দেবে রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলি।, ব্যায়ামের মাধ্যমে হাতের লেখার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী স্কুল শিক্ষা দপ্তর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী  পড়ুয়াদের হাতের লেখায় উন্নতিকরণের‌ এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সিলেবাস কমিটি। হাতের লেখা ভালো করতে আঙুলের ব্যায়ামগুলি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার বইতে ছবি সহ দেওয়া হয়েছে। এখানে দেখানো হয়েছে, বাঁ হাতে খাতা ধরে লিখতে হবে। খুব চাপ না দিয়ে না লিখে হালকা করে পেন্সিল ধরে লিখতে হবে, লেখার সময় পেন্সিল বা পেনের কাছে মুখ এগিয়ে না রেখে একটু দূরে রাখতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলি।

এক্ষেত্রে বইয়ের পাতায় যে ব্যায়ামগুলি দেখানো হয়েছে সেগুলি বেশ মজাদার। যেমন সাধারণত যে তিনটি আঙুল ব্যবহার করে লেখা হয়, সেই আঙুলগুলি দিয়ে কাগজ ছিঁড়ে গোল্লা পাকাতে হবে। এতে আঙুলের সঞ্চলনা বাড়বে। আঙুলগুলিকে এক সরলরেখায় পাশাপাশি, উপর-নীচে যাতায়াত করাতে হবে। ডান দিক দিয়ে এবং বাঁ দিক দিয়ে উপর-নীচ এবং পাশাপাশি প্যাঁচানো অভ্যাস করতে হবে। আঙুলের সাহায্যেই কাল্পনিক গোলকার ছবি আঁকতে হবে। উপরে, নীচে, ডাইনে, বাঁয়ে অর্ধগোলাকার ছবিও আঁকতে হবে। আঙুল দিয়ে ওপর থেকে নীচে আবার নীচ থেকে ওপরে বিভিন্ন স্থানে বিন্দু দিতে হবে।  এমন আরও কয়েকটি ব্যায়াম দেখানো হয়েছে বইয়ের পাতায়। এর জন্য থাকছে একটি অনুশীলন বই যা ইতিমধ্যেই প্রত্যেক স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি স্কুলগুলির অনুকরণে বাচ্চাদের হাতের লেখা ভালো করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। প্রথম থেকেই বেসরকারি স্কুলগুলিতে হাতের লেখার বই রাখা হয়েছে। সেইসব বইয়ে খুদে পড়ুয়াদের নিয়মিত  হাতের লেখা অনুশীলন করতে হয়। তবে তার থেকেও কয়েকধাপ এগিয়ে সরকারি প্রাইমারি স্কুলেগুলির জন্য এমন উদ্যোগ অভিনব বলেই মনে করছে শিক্ষামহল। এবিষয়ে স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা পাঠ্যক্রমের রূপকার দীপেন বসু জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে এগনোর চেষ্টা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিদেশী কায়দায় উদ্ভাবনীমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাতেকলমে বিভিন্ন জিনিস শেখানো হবে বাচ্চাদের, যা এদেশে এক প্রকার নজিরবিহীন। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরাও বিষয়টিকে নতুন এবং আকর্ষণীয় বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, সরকারি স্কুলে প্রাথমিক স্তরে হাতের লেখা উন্নতি করার জন্য সেভাবে উদ্যোগী নন শিক্ষকরা। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে বিষয়টিকে নির্দেশিকা আকারে পাঠানো হয়েছে প্রাইমারি স্কুলগুলিতে। ফলে এখন থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদেরও বাধ্যতামূলকভাবে এই নির্দেশ পালন করতে হবে। সুতরাং, উন্নত মানের বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলের ধাঁচে সরকারি প্রাইমারি স্কুল গুলির উন্নতি করণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য বলেই মনে করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + eighteen =