কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিকে ‘কালা কানুন’, ‘অগণতান্ত্রিক’ বলছে শিক্ষা সমাজ

কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিকে ‘কালা কানুন’, ‘অগণতান্ত্রিক’ বলছে শিক্ষা সমাজ

কলকাতা: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে নয়া শিক্ষানীতি চালু করেছে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে নয়া শিক্ষানীতি।প্রাথমিক থেকে শুরু করে মধ্য ও উচ্চশিক্ষায় বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে কেন্দ্র দশমের পরীক্ষা হয়েছিল এর মতো ব্যবস্থা উঠে গিয়েছে। বেড়েছে অনার্স কোর্সের মেয়াদ।জাতীয় শিক্ষা নীতি ঘোষিত হওয়ার পর শিক্ষা মহলে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷

আরও পড়ুন- ১০ হাজার শিক্ষককে পিওন-রাঁধুনি-সাফাইকর্মী পদে চাকরি দিচ্ছে সরকার

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক শিক্ষার জনক বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম প্রয়াণ দিবসটি কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রইল৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ওই দিনে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে অনুমোদন দিয়েছে৷ যে শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে গোটা দেশের শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-পড়ুয়া-অভিভাবকরা প্রতিবাদ করছেন, সেই শিক্ষানীতি আসলে শিক্ষার কর্পোরেটিকরণের রাস্তা খুলে দেবে৷ মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণার জন্ম দিতে সাহায্য করবে৷ গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার মূলে কুঠারাঘাত করবে৷ শ্রেণি-কক্ষ শিক্ষার পরিবর্তে অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দেবে এবং সব থেকে বড় কথা শিক্ষা পরিচালনায় একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করে চূড়ান্ত কেন্দ্রীকরণ করবে৷ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেমিস্টার প্রথা চালু করায় স্কুল স্তর থেকেই শিক্ষার গভীরতা হ্রাস পাবে৷ স্টেকহোল্ডারদের মতামতের প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে এই শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এমন এক সময় তা গ্রহণ করা হচ্ছে যখন মানুষ রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবেন না৷ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র নিন্দা করছি এবং অবিলম্বে এই শিক্ষানীতি প্রত্যাহারের দাবি করছি৷’’

আরও পড়ুন- ক্লার্ক পদে রেকর্ড নিয়োগ সম্ভাবনা রাজ্যে, ৬৬ হাজার প্রার্থীকে ডাক PSC-র

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ এড়িয়ে হিটলারি কায়দায় নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি আইনে পরিণত করল, তার তীব্র সমালোচনা করছি আমরা৷ বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্ম বর্ষে, ১৩০ তম প্রয়াণ দিবসে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে  ফ্যাসিস্ট কায়দায় জাতীয় শিক্ষানীতিকে আইনে পরিণত করল তা এককথায় লজ্জাজনক৷ আমরা মনে করি, জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করার ফলে এদেশের সাধারণ গরিব ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাবে৷ এই শিক্ষা নীতির ফলে শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে৷ এই জনবিরোধী শিক্ষানীতি মধ্যযুগীয় ধারণার জন্ম দেবে৷ গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার মূলে আঘাত করবে৷ এই শিক্ষানীতিতে বিদ্যালয় স্তরে
( ৫ + ৩ + ৩ + ৪) স্তর থাকায় শিক্ষার ব্যয় ভার ও সময় অনেকটা বেড়ে যাবে৷ ফলে দেশে স্কুলছুটের প্রবণতা আরও বাড়বে৷ এর সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষাকে অস্বীকার করার ফলে এদেশের গরীব ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷  নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেমিস্টার প্রথা চালু করায় স্কুল শিক্ষায় গভীরতা কমে যাবে ও প্রান্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় আসার প্রবণতা হ্রাস পাবে। আমরা এই বিপর্যয় কারী অগণতান্ত্রিক ও অবৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন- সুখবর! PSC ক্লার্ক পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পার্ট টু’র দিনক্ষণ ঘোষণা কমিশনের

জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি৷ প্রেস বিবৃতি জারি করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষার বেসরকারীকরণ ও সিলেবাসে অবৈজ্ঞানিক, ধর্মীয় চিন্তার অনুপ্রবেশকে আইনি স্বীকৃত দেওয়া হল৷ আমাদের সমিতি-সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রেমী মানুষকে এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানাচ্ছি৷ অবিলম্বে শিক্ষা ধ্বংসকারী এই নীতি প্রত্যাহার করছি আমরা৷’’

আরও পড়ুন- শিক্ষকদের জন্য জারি হচ্ছে নয়া নিময়, নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- ইংরাজি তুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা শিক্ষাদান, বাম-পথে কেন্দ্রের শিক্ষানীতি

আরও পড়ুন- উচ্চশিক্ষার মাঝে নেওয়া যাবে দীর্ঘ বিরতি, লাটে মাধ্যমিক, এম ফিল! নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল বদল, কমছে দশমের গুরুত্ব, নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- গুরুত্বহীন মাধ্যমিক, ৪ বছরে অনার্স, কলা-বিজ্ঞান মিশিয়ে নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

আরও পড়ুন- স্কুলশিক্ষায় আমূল বদল, গুরুত্বহীন মাধ্যমিক! নয়া শিক্ষানীতিতে অনুমোদন কেন্দ্রের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × one =