করোনায় বদলে যাচ্ছে স্কুল! কীভাবে শুরু পঠন-পাঠন? মত পর্ষদ সভাপতির

করোনায় বদলে যাচ্ছে স্কুল! কীভাবে শুরু পঠন-পাঠন? মত পর্ষদ সভাপতির

কলকাতা: করোনা ঠেকাতে দাওয়াই শারীরিক দূরত্ব৷ আর এই দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে জারি হয়েছে লকডাউন৷ করোনা বিধি-নিষেধের জেরে  বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুলের দরজা৷ কিন্তু, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে কবে খুলবে স্কুল? স্কুলবাড়ির আনাচে-কানাচে কবে শোনা যাবে পড়ুয়াদের সেই গুজগুন শব্দ? ফিসফিস, চিৎকার৷ দিনের শেষে বাজবে কবে ছুটির ঘণ্টা? করোনা কাটিয়ে স্কুল খুললেও কীভাবে শুরু হবে পঠন-পাঠন? নিজের মতামত জানিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়৷

করোনা সংকট কাটিয়ে কীভাবে শুরু হবে স্কুলের পঠন পাঠন? ইতিমধ্যেই এই নিয়ে চর্চা শুরু করেছে সরকার৷ মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল-কলেজ৷ করোনা আবহে বন্ধ স্কুল নতুন করে খুললেও ৩০% পড়ুয়া নিয়ে ক্লাস করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র৷ স্কুল খুললেও শারীরিক দূরত্ব বিধি রেখে নতুন করে ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতির স্কুলে কোনরকম জমায়েত, সেমিনার কিংবা অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে৷ দিন ভাগ করে করে ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই এনসিইআরটি গাইডলাইন তৈরি করতে চলেছে৷ কবে স্কুল খুলবে তা জানানো হলেও এনসিইআরটি তরফে স্কুলগুলির জন্য গাইডলাইন তৈরি করার প্রস্তুতি শুরু করেছে৷ ইতিমধ্যেই নবম-দশমের জন্য বিকল্প অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে এনসিইআরটি৷ মোবাইল, এসএমএস, টেলিভিশনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও করা হয়েছে সওয়াল৷

থেমে নেই রাজ্য৷ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনাও হচ্ছে স্কুল খোলার বিষয়ে৷ ইতিমধ্যেই প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করছে রাজ্য শিক্ষা দফতর৷ স্কুল কবে থেকে চালু হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজ্যস্তরে আলোচনা৷ স্কুল চালু হলে কী কী পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তা নিয়েও চলছে চিন্তাভাবনা৷ শিক্ষকদের কাছ থেকে স্কুল খোলার খসড়া চাওয়া হয়েছে৷ রাজ্য শিক্ষা দফতরও নিজেদের উদ্যোগে খসড়া প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আধিকারিকরা শুরু করেছেন কাজ৷ একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও মতামত জানতে চাওয়া হচ্ছে বলে রাজ্য শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর৷

করোনাকে সঙ্গে নিয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? তা নিয়ে ব্যক্তিগত মত জানিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়৷ নিউজ ১৮ বাংলা’র একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন কল্যাণবাবু৷ শুক্তবার সন্ধ্যায় নিউজ ১৮ বাংলা’র লাইভ সম্প্রচারে কল্যাণবাবু জানিয়েছেন, করোনা থেকে যাচ্ছে৷ করোনাকে নিয়েই আমাদের থাকতে হবে৷ করোনাকে মানিয়ে নিয়ে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ আমরা যদি স্কুল খুলি, তাহলে সামাজিক দূরত্বকে পালন করা হবে৷ স্যানিটাইজ কীভাবে হবে এবং পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে কীভাবে? বাড়িতে কীভাবে থাকবে? তাদের অভিভাবকদেরও কিছু পরামর্শ দিতে হবে৷ সব থেকে বড় কথা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আসবে যখন, তখন তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য তাদের যেমন পাঠ দেওয়ার দরকার,তেমনি অভিভাবকদের বোঝানোর দরকার, একইসঙ্গে শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারীদেরও এই বিষয়ে সতর্ক থাকা খুব জরুরি৷’’

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই অনলাইন ও বেসরকারি টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ লকডাউন ৫০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে৷ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন পড়ুয়ারা৷ এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতর কী ভাবছে? নিউজ ১৮ বাংলাকে জবাব জানিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়৷ জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি স্কুলে পঠন-পাঠনের জন্য ক্লাস হচ্ছে দুটি চ্যানেলে৷ কিন্তু সমস্যা একটা আছে৷ অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট নেই৷ সেখানে এই অনলাইন ক্লাস সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছে না পড়ুয়ারা৷ আরেকটা বিষয় রয়েছে, অনেক গরীব ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, তাদের  বাড়িতে টিভি নেই৷ মোবাইল নেই৷ তারা কিন্তু সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷’’

এরপর  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আরও বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে অভ্যস্ত, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসে, নিজেদের মধ্যে লেখাপড়া, খেলাধুলা, খুনসুটি হয়৷ সামাজিকতার তৈরি হয়৷ কিন্তু করোনা আটকাতে গেলে এই জায়গাটাকে সমঝোতা করলে চলবে না৷ আমরা কতটা পারব সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে৷ করোনা কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে? তাদের এই ছোট ছোট পড়ুয়াদের এই শিক্ষাদান করা প্রয়োজন৷ স্কুল খুললেও কিভাবে পঠন-পাঠন হবে, সেটা নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি৷ ক্লাস শেষ হয়ে গেল একজন শিক্ষক বেরিয়ে গেলেন অন্য শিক্ষক চলে আসার মাঝের সময়টা ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু নিজেদের ভেতরে মেলামেশা করে৷ এটা রুখতে আমাদের স্কুলের ভেতরে নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীরা যাতে দূরত্ব বজায় থাকে৷ একটা ক্লাস শেষ হয়ে গেলে সেই শিক্ষক বেরোবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তার পরবর্তীত শিক্ষক ক্লাসে আসছেন৷ এরকম কিছু নিয়মকানুন শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আনতে হবে৷ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আনতে হবে৷ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের জন্যও নিয়ম আনতে হবে৷ এই ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করাতে হবে৷ প্রয়োজনে ৫০ শতাংশ পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস করানো যেতে পারে৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − seven =