সবজি বিক্রি করে সংসার চালানো উচ্চমাধ্যমিকে কৃতী শিমূলের স্বপ্ন শিক্ষকতা

হাওড়া: আমতার উদং বাজারে শিমুল সবজি বিক্রি করে। সেই শিমূলই উচ্চমাধ্যমিকে ৮৫.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। দু’বছর আগে দিনমজুর বাবা মারা গিয়েছিলেন। সংসারে নেমেছিল দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। সংসারে আলো ফোটাতে সবজি বিক্রেতার কাছে কাজ নিয়েছিল। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা শিমূল উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৪২৯। শিমূলের সাফল্যে গর্বিত আমতার উদং এলাকার বাসিন্দারা। আঠারো বছর উচ্ছ্বল-আনন্দের। এ বয়স খেলাধুলা

সবজি বিক্রি করে সংসার চালানো উচ্চমাধ্যমিকে কৃতী শিমূলের স্বপ্ন শিক্ষকতা

হাওড়া: আমতার উদং বাজারে শিমুল সবজি বিক্রি করে। সেই শিমূলই উচ্চমাধ্যমিকে ৮৫.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। দু’বছর আগে দিনমজুর বাবা মারা গিয়েছিলেন। সংসারে নেমেছিল দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। সংসারে আলো ফোটাতে সবজি বিক্রেতার কাছে কাজ নিয়েছিল। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা শিমূল উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৪২৯। শিমূলের সাফল্যে গর্বিত আমতার উদং এলাকার বাসিন্দারা।

আঠারো বছর উচ্ছ্বল-আনন্দের। এ বয়স খেলাধুলা করার। এ বয়স বই-খাতা-কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার। লেখা পড়া শিখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার । কিন্তু চরম আর্থিক অনটনের কারণে উচ্ছ্বল-আনন্দ আর খেলাধুলায় ছেদ পড়লেও লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়নি। কেননা ছিল বড় হওয়ার লড়াইয়ের জেদ। আমতার উদং উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শিমূল চক্রবর্তী দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে আজ উচ্চমাধ্যমিকে কৃতী। অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করেই অভাব-অনটন-আর্থিক প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বাজারে আনাজ বিক্রির কাজ করে সে। পরিবারের অন্ন সংস্থানের পাশাপাশি লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া এই মেধাবী এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৪২৯ নাম্বার পেয়েছে।

শিমূলের বাড়ি আমতা-১ নং ব্লকের উদং গ্রামে। বাবা অশোক চক্রবর্তী দিনমজুরি খেটে স্ত্রী,পুত্র-কন্যাসহ কোনও মতে চার জনের সংসার চালাতেন। কিন্তু, হঠাৎই দু’বছর আগে বাবাকে হারিয়ে অদ্ভুত এক আঁধারের সম্মুখীন হতে হলো এই কৃতী ছাত্রের পরিবারকে।প্রবল অন্ধকারের মধ্যেও আঁধারের ভ্রুকুটিতে ভয় না করে শিমূলের জীবনসংগ্রাম শুরু হয়েছিল। একদিকে অসম্ভব দারিদ্রতা, অন্যদিকে সংসারের হাল নিজের কাঁধে নিয়েই জীবন সংগ্রামের কঠিন ধাপগুলি অতিক্রম করার কাজে নামতে হলো বছর আঠারোর এই ছাত্রকে। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হলো অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের এক অদম্য লড়াই। যে লড়াইয়ের সূচনা হয় ভোর চারটেয় ঘুমহীন ক্লান্ত চোখ মুছতে মুছতে। স্থানীয় উদং বাজারে ছোটার মধ্য দিয়ে।সেখানে দশটা পর্যন্ত সবজি বিক্রির কাজে সহায়তা। তারপর কোনোরকমে দু’এক মুঠো ভাত খেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে চলা। কোনও কোনওদিন ভাতও জুটতো না ঠিকমত। উদং হাই স্কুল থেকে ফিরেই সামান্য কিছু আয়ের আশায় আবারও তাকে ছুটতে হতো বাজারে সবজি গোছানোর কাজে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শুরু হয় নতুন স্বপ্ন দেখার এক অদম্য লড়াই। সেই লড়াই চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। কিংবা কখনও তার অজান্তেই তা পৌঁছে যায় ভোর পর্যন্ত। তারপর আবার কাকভোরে ছুটে চলা উদং বাজারের দিকে। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় ৯২,ইংরেজিতে ৫৭,ইতিহাসে ৮১,ভূগোলে ৮৭,রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৫ ও সংস্কৃতে ৮৪ পেয়েছে শিমূল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *