আজ বিকেল: আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো এদেশে নতুন কোনও বিষয় নয়। আদতে অপরাধ হলেও কার্যক্ষেত্রে একে অপরাধ হিসেবে কতটা গন্য করা হয় তা আলোচনা সাপেক্ষ।এককথায় রাজনীতি থেকে শিক্ষা প্রশাসন থেকে প্রতিরক্ষা সবেতেই নিয়ম ভাঙার খেলা চলছে অহরহ, আর তা দেখেও নিয়মের ধারকদের চক্ষু মুদে বসে থাকারও অন্ত নেই। এবার প্রশ্ন উঠল নিয়ম ভাঙছে কারা, কারা আবার যাঁরা নিয়ম মানার প্রাথমিক পাঠ স্কুল জীবনে পড়ুয়াদের দিয়ে থাকেন সেই তাঁরাই। হ্যাঁ, স্কুল শিক্ষকরা নির্বিবাদে সরকারি বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন, যারফলে নিতান্তই গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন গৃহশিক্ষকরা।
বেশ কয়েকবছর আগে রীতিমতো আইন করে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ছাত্র পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর লুকিয়ে চুরিয়ে চললেও প্রকাশ্যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রাভেট টিউশনি করতে দেখা যেত না। তবে তা সীমিত সময় স্থায়ী ছিল, আইনে ফাঁদে পড়ার ভয় কাটতেই ফের রমরমিয়ে চলছে গৃহশিক্ষকতা। স্কুলের ক্লাসের পর বা আগে নিয়ম করে ছাত্র পড়ানো অব্যাহত। স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃত গৃহশিক্ষকদের রুজিতে টান পড়েছে। কেননা, গুরুত্বপূর্ণ নোটস থেকে শুরু করে পরীক্ষার আগে লাস্টমিনিট সাজেশন এগুলি একমাত্র স্কুল শিক্ষকরাই দিতে পারেন, তাই পড়া নিয়ে সমঝোতা করতে রাজি নয় পড়ুয়ারা। একই সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও। তাই গৃহশিক্ষক নির্বাচনে সর্বদাই এগিয়ে থাকছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।এই প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পেরে দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়ছেন প্রকৃত গৃহশিক্ষকরা। তাতে কিন্তু কোনওপক্ষেরই হেলদোল নেই। আসলে তো পরীক্ষায় পাশ করার প্রশ্ন স্কুলের শিক্ষককে এড়িয়ে গেলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না, তাই ছাত্ররাও এক্ষেত্রে অনেকসময় বাবামায়ের কথা শুনতে বাধ্য।
বলাবাহুল্য, দীর্ঘদিন একই কাজ চলার কারণে গৃহশিক্ষকরা চুপ করে থাকতে থাকতে একেবারেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। এবার ঘউরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো স্কুল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পথে নামলেন উত্তর ২৪ পরগনার গৃহশিক্ষকরা। এদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির ব্যানার নিয়ে তাঁদের মিছিল করতে দেখা যায়। তাদের পেটে লাথি মারার যে আয়োজন স্কুলের শিক্ষকরা করে চলেছেন তা নিতান্তই অমার্জনীয় অপরাধ। এই পরিস্থিতির অবিলম্বে অবসান হোক এমন দাবি নিয়েই নারী পুরুষ নির্বিশেষে এদিন মিছিলে হাঁটলেন। এই আবেদন আদৌ আইন রক্ষকদের টনক নড়ায় কি না তাই এখন দেখার।