কলকাতা: অবশেষে খুলছে রাজ্যের স্কুল-কলেজ৷ ১৫ নভেম্বর থেকে স্কুল খোলার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ১৫ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন তিনি৷ তার আগে স্কুল-কলেজ পরিষ্কার করে প্রস্তুত হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
আরও পড়ুন- রাজ্যজুড়ে স্কুল খোলার তোড়জোড়, অপেক্ষা নির্দেশ আসার
প্রসঙ্গত, আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পুজোর পর স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া হবে৷ সেই মতোই এদিন স্কুল খোলার নির্দেশ দেন তিনি৷ তবে পুজো মিটতেই ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে বলেন, ‘‘স্কুল-কলেজ খোলার আগে প্রস্তুতি জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। দীর্ঘ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে পরিকাঠামোগত কাজ সেরে ফেলতে পারেন সেই জন্য তাঁদের সময় দিতে হবে। তার পরেই স্কুল শুরু হবে।’’ করোনা সংক্রমণের জেরে গত বছর মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ৷ চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হলেও, দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় তা ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ গত বছর থেকে ধরলে প্রায় ২০ মাস পর স্কুল কলেজ খুলতে চলেছে৷
এদিকে করোনা আবহে স্কুল খোলা নিয়ে ড. দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ১৮ বছরের নীচে যে শিশু বা কিশোর রয়েছে তাঁদের মধ্যে থেরোপজেটিভিটি রয়েছে৷ এটা জুলাই মাসের ডেটা৷ এতদিনে সেই রেট কিছুটা হলেও বেড়েছে৷ পুজোর সময় শিশুরা ভ্যাকসিন না নিয়েই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছে৷ প্রাইভেট টিউশনও করছে৷ এই অবস্থায় স্কুল খোলাটাও প্রয়োজন৷ স্কুল না খুললে শিক্ষা ব্যবস্থা থমকে যাবে৷ তবে শুধু স্কুল খুললেই হবে না, কড়া নজরদারির মধ্যে গোটা পরিস্থিতিটাকে রাখতে হবে৷ কারও মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিলেই তাকে আইসোলেশনে রাখা বা কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা থাকবে৷ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আস্তে আস্তে স্কুল খুলতে হবে৷ পাশাপাশি দীপাবলি, ভাইফোঁটাতে অনুশাসন বজায় রাখতে হবে৷
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী৷ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতির জন্য বরাদ্দ টাকা দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে ও সমস্ত লোকাল ট্রেন চালু করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে পঠন-পাঠনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের দ্রুত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানাচ্ছি। এখনও সকল বিদ্যালয়ে গ্র্যান্ড পৌঁছায়নি। দ্রুত তা সমস্ত বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হোক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর গড়ে তোলার জন্য অতি দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে সমস্ত লোকাল ট্রেন চালু করা হোক৷’’
মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘গত ২০ মাস স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ থাকায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। অনেক ছাত্রীর অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে আবার অনেকেই দারিদ্র্যের কারণে শিশুশ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন কাজে যোগদান করেছে, এ অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের। আমরা দীর্ঘদিন স্কুল খোলার পক্ষে আন্দোলন করে আসছি, আমরা মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্কতা বজায় রেখেই স্কুল, কলেজে পঠন-পাঠন চালু করতেই হবে, একই সাথে সমস্ত লোকাল ট্রেন চালু করার এবং অবিলম্বে ৬-১৮ বছর সমস্ত শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিকের ক্লাস শুরু করারও দাবি জানাচ্ছি৷’’