নয়াদিল্লি: বিগত ৩৪ বছর পর নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির প্রবর্তন করল সরকার। শিক্ষানীতির সর্বপ্রধান অঙ্গ হিসেবে উঠে এল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষার ব্যবহার। ফলে সরাসরি না বলা হলেও ইংরাজি শিক্ষার বিষয়টি তুলে দেওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করল বর্তমান সরকার, বলে মনে করছে বিদগ্ধ মহল। বাম আমলের শিক্ষানীতির পথ অনুসরণ করার চেষ্টা বলেও মনে করা হচ্ছে। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ইংরাজি শিক্ষা ভয়ানকভাবে ধাক্কা খেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাম আমলের শিক্ষানীতির জেরে যেমন গোটা একটি প্রজন্মের ইংরাজির ভিত কাঁচা হয় তেমনই এই নীতির প্রণয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আগামী প্রজন্ম। এমনই দাবি শিক্ষামহলের। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মঞ্জুর করা এই নীতির উদ্দেশ্য ২০৩৫ সালের ভিতর দেশের জিইআর বা গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ৫০ শতাংশে নিয়ে আসা। শিক্ষানীতির ঘোষণার পর এক সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর একথা বলেন। তাঁর দাবি একবিংশ শতকের জন্য নতুন শিক্ষানীতির প্রবর্তন হল।
গত ৩৪ বছরের কোনও জাতীয় শিক্ষানীতি না হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি আরও জানান আত্মবিশ্বাসী যে এই শিক্ষানীতি শুধু সমাজ বা দেশের নয় বিশ্বের শিক্ষা প্রবক্তাদের নজর কাড়বে। মূলত অক্ষর ও সংখ্যাজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করানোই প্রাথমিক উদ্দেশ্য। শিক্ষার মূল ধারাগুলিতে বদল এনে আলাদা কোনও বিভাগ এখন আর সেভাবে থাকবে না বলে জানান জাভরেকর। এমনকি পেশাগত, শিক্ষাগত কিংবা অতিরিক্ত বিষয় সংক্রান্ত বিভেদও মানা হবে না বলেও তিনি জানান। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী বোর্ডের পরীক্ষায় পড়ুয়াদের মুখস্থ বিদ্যার বদলে তারা কতটা শিখেছে তার ওপর জোর দেওয়া হবে। পরীক্ষার রেজাল্টেও প্রাপ্ত নম্বরের বদলে দক্ষতা বোঝার ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হবে।
উচ্চশিক্ষা সচিব অমিত খাড়ে এই নীতি ঐতিহাসিক দাবি করে বলেন, এখন থেকে উচ্চশিক্ষার সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি একই ছাতার তলায় আসবে। অনুমতি নিতে গেলে বারবার বিভিন্ন ইনস্পেক্টরের কাছে ছুটে যাওয়ার বদলে একটি জায়গা থেকে অনুমতি নিলেই হবে। সারাদেশের ৪৫ হাজার অনুমতিপ্রাপ্ত কলেজের মধ্যে তাদের অ্যাক্রেডিটেশনের ভিত্তিতে শিক্ষাগত, প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হবে। আঞ্চলিক ভাষায় ই-কোর্স চালু হবে। ভার্চুয়াল ল্যাব তৈরি হবে এবং গঠিত হবে ন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজি ফোরাম। শিক্ষানীতি তৈরীরর জন্য বিস্তৃত সমীক্ষা হয়েছে বলে দাবি খাড়ের। তিনি জানান, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবিষয়ে। সরকার, বিভিন্ন মন্ত্রক এবং আমজনতার মতও এবিষয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।