কলকাতা: ফের কি বদলে যেতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ঘোষিত দিনক্ষণ? এবার রাজ্য সরকারকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার বিষয়ে সুপারিশ পাঠানেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ৷ এই পরিস্থিতিতে স্কুল এখনই খোলা উচিত নয়৷ প্রয়োজনে আরও খানিকটা পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা৷ রাজ্য সরকারকে এই মর্মে মতামত জানিয়েছেন রাজ্যের বিশিষ্টরা৷
করোনা পরিস্থিতির জেরে ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিকের ৩ দিনের পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর৷ করোনা অবাহে আনলক ওয়ান পর্ব শুরু হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি ঘোষিত হয়েছে সরকারি ভাবে৷ দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা সূচি সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী ২, ৬, ৮ জুলাই পরীক্ষা নেওয়ার কথা৷ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলেও এবার সেই পরীক্ষা আরও খানিকটা পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন বিশিষ্টরা৷ নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, শুভাপ্রসন্নর মতো বাংলার প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের একাংশ৷ এছাড়াও ওই তালিকায় রয়েছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি মতো বিশিষ্টরা৷ রাজ্য সরকারের তরফে সিলেবাসে বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মতামত জানতে চান৷
সেখানে মূলত দু'টি বিষয় উল্লেখ করা হয়৷ করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে এখন স্কুল খোলা ঠিক হবে কি না এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব যায় কিনা, সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যানের আবেদনে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন বিশিষ্টরা৷ জানিয়েছেন তাঁদের মতামত৷ বিশিষ্টদের বড় অংশ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁরা চাইছেন না উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এখনই নেওয়া হোক৷ প্রয়োজনে আরও কিছুটা পিছিয়ে যেতে দেওয়া হোক৷ কারোুনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে গেলে, তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ আর সেই কারণে জীবন বাঁচালে, পরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলেও অধিকাংশই জানিয়েছেন তাঁদের মতামত৷ শুধু সমাজের বিশিষ্টরা নয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও এই বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে সবাই প্রায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে যা করোনা পরিস্থিতি যে ভাবে বাড়ছে, তাতে স্কুল খোলা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে৷
সূত্রের খবর, বিশিষ্টরা তাঁদের মতামত রাজ্য সরকারকে পাঠিয়েছেন৷ জীবন বাঁচলে পরে পরীক্ষা বলেও জানিয়েছেন তাঁরা৷ বিশিষ্টদের এই মতামত ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের টেবিলে পৌঁছে গিয়েছে বলে খবর৷ সে ক্ষেত্রে কিছু বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে৷ তারা অনলাইনে পঠন-পাঠন নির্ভরতা বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন৷ যদিও সরকারি সূত্রে খবর, বিশিষ্টদের এই মতামত রাজ্য সরকারের ঘরে জামা পরেছে৷ তবে আদৌ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে কি না সে বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ যদিও রাজ্যের শিক্ষা দফরের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বদলাচ্ছে না উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন৷ নির্ধারিত সূচি মেনেই জুলাই মাসের ২, ৬ এবং ৮ তারিখে বাকি পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে৷ বদলাবে না পরীক্ষাকেন্দ্রও৷ সেই সঙ্গে ইনভিজিলেটর বা পরিদর্শকদের পূর্বনির্ধারিত ডিউটি বহাল থাকবে এবং ২০ জুনের মধ্যে নির্ধারিত হেডকোয়ার্টারে তাঁদের পৌঁছে যেতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই ডিউটি বাধ্যতামূলক৷ কোনওরকম অজুহাত মান্য হবে না৷
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল অফ হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশন)-এর তরফে জারি করা আরও একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিও অপরিবর্তিত থাকবে৷ অর্থাৎ যাঁদের যেই পরীক্ষা কেন্দ্র আসন পড়েছিল, সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা হবে৷ এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১২ মার্চ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৭ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু করোনার জেরে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাকি থাকা অবস্থাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক। ২৩, ২৫ এবং ২৭ মার্চের পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে যায়। এর আগে বলা হয়েছিল ২৯ জুন, ২ জুলাই এবং ৬ জুলাই বাকি থাকা পরীক্ষাগুলি হবে। পরে ফের সূচি বদল হয়৷ বলা হয়, আগামী জুলাই মাসের ২, ৬ এবং ৮ তারিখ হবে উচ্চমাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা৷