কলকাতা: ১০জানুয়ারি ২০২০ থেকে স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দফতর। অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ফের সেই অতীতেরই পুনরাবৃত্তি। এমনকি শিক্ষা দপ্তরের নতুন নিয়মে মুচলেকা দিয়েও বহাল তবিয়তে প্রাইভেট টিউশন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকদের একাংশ। এমনই এক স্কুল শিক্ষককে নিজের বাড়িতে প্রাইভেট টিউশন করানোর সময় হাতেনাতে ধরে ফেললেন গৃহশিক্ষক কল্যান সমিতির কয়েকজন সদস্য। ঘটনা কোথাকার বা ওই শিক্ষকের পরিচয় সঠিক জানা না গেলেও। কমেন্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে ওই শিক্ষক বিজ্ঞাপনের৷
ভিডিওটি প্রকাশ হতেই স্যোশাল মিডিয়ায় সারা ফেলেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরা অন থাকায় কি প্রচন্ড চটে গিয়ে রীতিমতো হুমকির সুরে কথা বলছেন ওই শিক্ষক। এমনকি সংগঠনের সদস্যদের প্রায় গায়ের জোড়ে ওই ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন। ঘরভর্তি পড়ুয়াদের দেখেও বেশ বোঝা যাচ্ছে যে সকলেই খুব সতর্ক এবং লুকিয়ে টিউশন পড়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাই ক্যামেরা অন আছে শোনা মাত্রই কেউ হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা চালিয়ে গেছে, কেউ আবার যতটা সম্ভব মাথা গুঁজে মুখ লুকোতে ব্যাস্ত। ছাত্রীদের মধ্যে থেকে আবার ভিডিও করা নিয়ে জোরালো প্রতিবাদও শোনা যাচ্ছে। তবে সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল ওই শিক্ষক জোর গলায় বলছেন উনি নাকি সমাজসেবা করছেন। বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন।
এর আগেও 'আজ বিকেল' নিউজ পোর্টালে এই ধরণের শিক্ষকদের খবর তুলে ধরা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে সরকারি নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরেও এই শিক্ষকরা এতটাই গোপনে এই বেআইনি কাজ করছেন যে খবর পাওয়া দুষ্কর। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেরা যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদেরই টিউশন করান। তাই ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন, বিষয়টা জানাজানি হলেই পরীক্ষায় নম্বর কমে যাবে। শুধু তাই নয় গা বাঁচাতে ছাত্র-ছাত্রীদের মিথ্যে বলতেও শেখানো হয়। যেমন, ঘটনা কোনোভাবে জানাজানি হয়ে গেলে তাদের এটাই বলতে হবে যে, ওই শিক্ষক টিউশনের জন্য কোনো ফি নেননা। অর্থাৎ এই শিক্ষকের মত তারাও সমাজ সেবাই করেন। যদিও কমেন্ট সেকশনে অনেকেই এদের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে 'শিক্ষকতা'র মত আদর্শ একটি পেশার সম্মানহানি মেনে নিতে পারেনা কোনো শিক্ষিত সমাজ।
যাঁরা শিক্ষাদানে ব্রতী, তাঁরাই যদি দুর্বৃত্তমূলক আচরণ করেন তাহলে শুধুমাত্র নিজেদের শিক্ষাকে খাটো করছেন তাই নয়, একইসঙ্গে সার্বিকভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রকেও কলুষিত করছেন। যদিও অনেকেই এর জন্য পড়ুয়াদের অভিভাবকদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাদের প্রশ্রয়েই এই ধরণের শিক্ষকদের এত বাড়াবাড়ি বলেও উল্লেখ করেছেন। আসলে, স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়লে পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায়, অভিভাবকদের এই ধারণা কিন্তু আজও বদলায়নি।
তারওপর শিক্ষকদের হুমকি তো আছেই যে তাদের কাছেই পড়াতে হবে। তাই রুখে দাঁড়ানোর সাহস জোগাতে পারছেননা। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন 'শিক্ষকরা সরকারি সময় মেনে স্কুলে ঢুকে হাজিরার খাতায় স্বাক্ষর করে বেড়িয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এইসময়ের মধ্যে দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তিনিও তো খাতায় কলমে স্কুলে আছেন বলেই মনে করতে হবে।' এই কথার মর্মার্থ বুঝতে হবে শিক্ষকদেরই।