কলকাতা: দেশজুড়ে লকডাউন৷ শুনশান পথঘাট৷ বন্ধ স্কুল-কলেজ৷ শিকেয় উঠেছে পঠনপাঠন৷ করোনা, লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলার কয়েক লক্ষ পড়ুয়ার রাতের ঘুম উড়িয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার ফলাফল কবে হবে তা নিয়ে৷ পড়ুয়াদের উদ্বেগ কাটিয়ে ফল প্রকাশের সম্ভব্য সূচিও জানিয়েছে পর্ষদ ও সংসদ৷ ফল প্রকাশের বিলম্ব হওয়া আশঙ্কায় স্কুল-কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়েও চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷
লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিস বন্ধ৷ প্রশাসনিক কাজকর্ম আপাতত স্থগিত৷ ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা৷ লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগেই মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে৷ উচ্চমাধ্যমিকের ৩ দিনের পরীক্ষা এখনও বাকি৷ আরও কতদিন চলবে লকডাউন? কবে হবে উচ্চমাধ্যমিক স্থগিত থাকা পরীক্ষা? কবে প্রকাশিত হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল? তা নিয়ে ধন্দে সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা৷করোনার আবহে লকডাউনের জেরে পরীক্ষা ও পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷
এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি৷ শেষ হয়েছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি৷ ১০ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে৷ ইতিমধ্যেই প্রায় এক কোটি উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ শেষ৷ ১৭ শতাংশ নম্বর জমা পড়ে গিয়েছে৷ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু হলেও বাধ সেধেছে করোনা৷ আর তার জেরেই বন্ধ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাজ৷
কিন্তু কবে প্রকাশিত হতে পারে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল? এই বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘যদি ১৪ এপ্রিল পর লকডাউন শেষ হয়, তাহলে আমাদের পরীক্ষকরা খাতা জমা দেবেন৷ তারপর স্কুটিনি হয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে আসবে৷ ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু করতে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ সময় লাগবে৷ যদি ১৪ এপ্রিল লকডাউন শেষ হয়, তাহলে আমরা আশা করছি, জুন মাসের শেষের দিকে আমাদের ফলাফল প্রকাশ করা যেতে পারে৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে নির্দেশ আছে৷ এক্ষেত্রে সেটা কার্যকর করা যাচ্ছে না৷’’
মাধ্যমিক পরীক্ষায় খাতা দেখা ইতিমধ্যেই শেষ৷ কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে এখনও পরীক্ষা শেষ হয়নি৷ ২৭ মার্চ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২১ মার্চ পরীক্ষার পর স্থগিত হয়ে গিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা৷ একাধিক বিষয়ে নির্ধারিত ২৩, ২৫, ২৭ মার্চের পরীক্ষা এখনও বাকি৷ অনিশ্চয়তার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের প্রায় ৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷ তবে, সংসদ সূত্রে খবর, প্রধান পরীক্ষকের কাছে এখনও উত্তরপত্র আসেনি৷ পরীক্ষকদের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে৷ একইভাবে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ সেখানে পরীক্ষার্থী প্রায় ৮ লক্ষ৷ এই পরিস্থিতিতে কবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷
যদিও সংবাদমাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস জানিয়েছেন, ‘‘লকডাউন যদি ১৫ তারিখের পর উঠে যায়, আমরা স্থগিত থাকা পরীক্ষা এপ্রিলের শেষের দিকে পরবর্তী সূচি জানিয়ে দেব৷ যাতে এপ্রিলের মধ্যেই বাকি তিনটি পরীক্ষা হয়ে যায়৷ খুব দ্রুত হলেও আমাদের পরীক্ষা ফলাফল প্রকাশ করতে দেড় থেকে দুই মাস লেগে যাবে৷ তার মানে জুলাই মাসের শেষের দিকে ফলাফল প্রকাশিত হতে পারে৷’’
আইসিএসই, আইএসসি, সিবিএসই দশম দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা এখনও থমকে৷ নতুন নির্ঘণ্ট কবে প্রকাশিত হবে তা স্পষ্ট নয়৷ তার ওপর এখনও বিভিন্ন পরীক্ষার পরীক্ষা শেষ হয়নি৷ অন্যদিকে, চূড়ান্ত অনিশ্চিত জয়েন্ট দিয়ে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া৷ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আসন ভর্তির কথা মাথায় রেখে আগেই পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছিল রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড৷ গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেই পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ ফলাফল প্রকাশের পথেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে করোনা৷ জয়েন এন্ট্রান্স বোর্ড জানিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কিংবা অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়৷ কারণ জয়েন্টের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শংসাপত্র জরুরি৷ লকডাউনের জেরে উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা এখনও স্থগিত৷ এই পরিস্থিতিতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, জয়েন্টের জন্য প্রভিশনাল মার্কশিট দেওয়া কার্যত অসম্ভব৷ ফল প্রকাশ বিলম্বিত হওয়ায় স্কুল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ আর তাতেই শিক্ষাবর্ষে প্রভাব পড়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে৷