আম্বালা: যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে৷ এই প্রবাদটির মতোই খানিকটা কমল সিংয়ের জীবন৷ প্রতিদিন স্কুলের টিচার্স রুমে ঢুকে খাতাপত্র, চা-জল পৌঁছে দেওয়া এই মানুষটি মাঝে মধ্যেই দেখা যায় বই ডাস্টার-চক হাতে বিভিন্ন ক্লাস রুমে ঢুকে পড়তে৷ না, অন্য কোনও প্রয়োজনে নয়৷ তিনি ক্লাসে পৌঁছে যান পড়ানোর তাগিদে৷
যোগ্যতা যে সবসময় পদমর্যাদার পরিপূরণ নয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ কমন সিং৷ ফিজিক্সে এমএসসি পাস কমল ভাগ্যের ফেরে স্কুলের পিওন৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নীচু পদে চাকরি কর্মসংস্থানের বেহাল দশাকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল৷
তবে পদ যাই হোক সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই কমলের৷ স্বেচ্ছায় ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক ও ফিজিক্স পড়ানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি৷ একদিন স্কুলে অধিকাংশ শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন৷ ৪০০ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন ১৯ জন শিক্ষক৷ এর মধ্যে অঙ্কের শিক্ষক মাত্র একজন৷ সেই দিনে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনিও৷ বিষয়টি দেখে ভালো লাগেনি তাঁর৷ তাই পড়ানোর আর্জি নিয়ে সোজা প্রিন্সিপলের ঘরে চলে যান কমল সিং৷ প্রিন্সিপল তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্ক অবহিত ছিলেন৷ আপত্তি করেননি তিনি৷ সেদিন নবম শ্রেণির অঙ্ক ও ফিজিক্স ক্লাস নেন পিওন কমল৷
এর পরই ঘটনার চাকা ঘুরে যায় অন্যদিকে৷ কমল স্যার-এর ক্লাস করে ছাত্রছাত্রী এতটাই উচ্ছ্বসিত হয় যে, প্রিন্সিপলের কাছে কমল স্যারের ক্লাস করার আবদার জানায় তারা৷ কিন্তু আবদার করলেই তো সব পাওয়া যায় না৷ কমল কেমন পড়াচ্ছেন তা যাচাই করে দেখতে দশম শ্রেণির ক্লাসে উপস্থিত হন স্বয়ং প্রিন্সিপল৷ তাঁর পড়ানোর দক্ষতা ও বিষয়ের উপর দখল দেখে অবাক হয়ে যান তিনি৷ সিদ্ধান্ত নেন কাজ চালানোর জন্য কমলের হাতেই ছেলেমেয়েদের পড়ানোর দায়িত্ব সঁপবেন৷
বিদ্যালয়ের একমাত্র অঙ্কের শিক্ষক কাজে যোগ দেন তার কিছু দিন পরেই। এর আগে ভোটের কাজ, খাতা দেখা, বোর্ডের পরীক্ষার খাতা দেখার পাশাপাশি একাই এক সপ্তাহে প্রায় ৫৪টা ক্লাস করান কমল৷ অঙ্কের শিক্ষর স্কুলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর চাপ খানিকটা কমাতে সপ্তাহে ১৭-১৮টা ক্লাসের ভার দেওয়া হয় কমলের হাতে৷ ফিজিক্সে পোস্টগ্র্যাজুয়েট কমলের যোগ্যতা রয়েছে উঁচু ক্লাসে পড়ানোর৷ তবে হরিয়ানার বিভিন্ন স্কুলে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে৷ ঘটতি রয়েছে শিক্ষকের৷ এই স্কুলেও পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তবে চাকরির এই বেহাল অবস্থাপর কথা মানতে চাননি হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী৷
কমলের হাতে কলম ওঠার পর পিওনের দায়িত্ব সামলাচ্ছে কে? এই প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের প্রিন্সিপল জানান, পিওনের দায়িত্বও নিজের হাতে সামলাচ্ছেন কমল৷ স্কুলে ঢুকেই প্রাথমিক কাজগুলো সেরে ফেলেন তিনি৷ টেবিলে টেবিলে চা-জল পৌঁছে কাগজপত্র গুছিয়ে তবেই ক্লাস নেওয়া শুরু করেন কমল স্যার৷ তাঁর পড়ানোর দক্ষতা দেখে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বাকি শিক্ষকরাও৷