কলকাতা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সামান্য আঁচ লাগতেই সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, কলেজ সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেসব এখন কবে খুলবে তা ভাবা এখন দুর অস্ত। আগে তো প্রাণ বাঁচুক। তাই থমকে গেছে সমস্ত পঠনপাঠন, যার জন্য ভোগান্তি বেড়েছে৷ কারণ শুধু যে স্কুল কলেজ বন্ধ তা নয়, বন্ধ হয়েছে প্রাইভেট টিউশনও। লকডাউনে বাড়ি বাইরে পা রাখা নিষিদ্ধ৷ বাইরে বেরলেই মিলছে পুলিশের লাঠির ঘা৷ তাই এসবের জন্য ঘরবন্দি অবস্থাতেই চলছে পড়াশোনা৷ তবে আধুনিক নেট দুনিয়া খানিকটা হলেও সেখানে আলোর দিশা দেখিয়েছে। সরকারের সহায়তায় ই-পোর্টাল খুলে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে বসেই পড়াশোনা চালাবার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে কতজন উপকৃত হচ্ছে আর কতজন তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা দেখার বিষয়। অবস্থাপন্ন ও শিক্ষিত পরিবারগুলির কথা যদি বাদ দেওয়া যায় তাহলে প্রশ্ন ওঠে কতজন ছাত্রছাত্রীদের ঘরে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার রয়েছে।
এবার যদি এই সমস্ত ইলেকট্রনিক সুবিধাগুলির কথা বাদ দেওয়া যায়, তাহলে বাকি থাকে বাড়িতে বসে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা। আর এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বড় সমস্যা, যেখানে চোখ রাখলেই দেখা যায় পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রী আরও পিছিয়ে পড়ছে। এর একমাত্র কারন অশিক্ষা। উচ্চশিক্ষিত বা শিক্ষার পেশার সঙ্গে যুক্ত বাবা মায়ের এই লকডাউনের অবস্থায় তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তেমন কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষিত বাবা মা অথবা বাড়িতে থাকা দাদা দিদির চেষ্টাতে খুব সহজেই সেইসব ছেলেমেয়েরাও তাদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বলা যেতে পারে এইসব শিক্ষিত মানুষের কাছে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। খুব জোর বেশি অসুবিধে হলে বিষয়গুলো নিজেরা পড়ে নিয়ে তাদের বিশ্লেষণধর্মী জ্ঞানের মাধ্যমে সেগুলি তাদের ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে দিতে পারছেন। এগিয়ে চলছে তাদের পড়াশোনা। শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায় সমস্ত বিষয়ের একের পর এক লেসন। কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন পড়াশোনা না জানা বা খুব সামান্য পড়াশোনা জানা বাবা মায়েরা।
এখনও অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে বাবা মা অল্প শিক্ষিত, সেখানে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার ছেলেমেয়েরা এবং যেখানে বড়ো দাদা বা দিদি নেই। তারা কিভাবে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। আজ লকডাউন না হলে তারা বুঝতেই পারতেন না যে জীবনে পড়াশোনাটা কতটা প্রয়োজন ছিল। তারা অনেক কষ্ট করে হয়তো ছেলেমেয়েদের টিউশন মাষ্টার দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাদের নিজেদের এ সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারন তখন টিউশন মাষ্টারের সাহায্যে তার ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই এগিয়ে যেত।
লকডাউনের জন্য এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। টিউশন মাষ্টার ছাড়াই পড়তে হচ্ছে সবাইকে। কোনও সমস্যা হলে বাবা বা মায়ের অথবা বাড়ির দাদা বা দিদির সাহায্য পাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এই সমস্ত বাবা মায়ের যাদের প্রথম সন্তান সন্ততি মানুষ হচ্ছে খুব কষ্টে। তারা খুব কষ্টে টিউশন মাষ্টারের ফিজ জোগাড় করতে পারেন কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় হেল্প কিভাবে করবেন তা এখন ভেবে পাচ্ছেন না। এসময় অনেকেই হয়তো নিজেদের অসহায় মনে হচ্ছে। হতেই পারে। কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছেন না।
পড়াশোনা খুবই দরকার , শুধু তাই নয় বিস্তর পড়াশোনা দরকার – একথা মনে হচ্ছে অনেকেরই। কারন বর্তমান পরিবর্তিত পড়াশোনা , পরীক্ষা পদ্ধতি , সিলেবাস , প্রশ্নের ধরন এইসব বিষয়গুলির সঙ্গে অনেকেরই দুরত্ব অনেক। সেই কবে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন অনেকেই। এখন এই নতুন পড়াশোনার পদ্ধতি এই সময়ে রপ্ত করবেন কিভাবে , এই দুঃশ্চিন্তাই তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আর এই অবস্থায় পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা আরও বেশি পিছিয়ে পড়ছে। কারন ক্লাসরুম বলছে এই পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। বলতে গেলে সংখ্যাটা অনেকই।
ঠিকভাবে নজরপাত করলে খুব সহজেই বোঝা যাবে এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রী , যারা অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও নিয়মিত পঠন পাঠন পদ্ধতির মাধ্যমে ঠিকই এগিয়ে যেত কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। পড়াশোনায় দুর্বল এইসব ছাত্রছাত্রীরা একদিকে পাচ্ছে না স্কুল বা টিউশনির দাওয়া , অন্যদিকে পাচ্ছে না বাবা মা বা অন্য কারোর সাহায্য। এর ফলে তাদের পড়াশোনায় তৈরি হচ্ছে এক বিরাট পরিমাণে ঘাটতি। এই ঘাটতির ফলে তারা কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। শুধু তাইই নয় পঠন পাঠন পুনরায় শুরু হবার পরও তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে এখানেও রয়েছে একটা বড়ো প্রশ্নচিহ্ন।