জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতায় শিক্ষক সংগঠনের সভা

জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতায় শিক্ষক সংগঠনের সভা

কলকাতা: স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন “শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রকৃত মানুষ করে তোলা”। কেন্দ্র সরকারের জনবিরোধী খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি(২০১৯) বাতিল এবং এবছর থেকেই প্রথম শ্রেণী থেকে পাশ ফেল চালু করা মূলত এই দাবিকে সামনে রেখে পাশাপাশি দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও একাধিক ভ্রান্ত নীতি সম্পর্কে সরকারকে অবগত করতে রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গান্ধী ভবনে আয়োজিত হল অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির রাজ্য সম্মেলন। 
সম্মেলনে বিজেপি সরকারের খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতির যে বিষয়গুলির বিরোধিতা করা হয়েছে সেগুলি হল-
খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি (২০১৯)প্রকৃত শিক্ষার পরিপন্থি এবং পুরোপুরি বৃত্তিমুখী। যেখানে স্কুল থেকেই ছাত্রছাত্রীদের পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্ট্রিম অর্থাৎ বিজ্ঞান, কলা, বানিজ্য বিষয়গুলি আলাদাভাবে না পড়তে দিলে ছাত্রছাত্রীদের সুসংহত চিন্তাভাবনা বিনষ্ট হবে। 
প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ শিক্ষাকে সম্পুর্ন ভাবে সরকারের কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা। মিশন নালন্দা, মিশন তক্ষশীলা শিক্ষাকে বিজ্ঞানমুখী করে তোলার পরিবর্তে ধর্মীমুখী করে তুলবে।
 শিক্ষা ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গুরুত্ব হ্রাস করবে।
উচ্চমাধ্যমিক তুলে দিয়ে ৪বছরের মাধ্যমিক স্তর, ৪ বছরের বিএলএ (ব্যাচেলর অফ লিবারেল আর্টস) কোর্স, ৪বছরের ইন্টিগ্রেটেড বিএড কোর্স ইত্যাদি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে অযথা দীর্ঘায়িত করবে। এতদিন ধরে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে। পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে যেটুকু সুযোগ সুবিধা আছে তাও খর্ব করবে তার প্রভাব পড়বে।

খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে পুঁজিপতি ও কর্পোরেট হাউসগুললিকে তাদের বার্ষিক লভ্যাংশের ন্যূনতম ০.০১ শতাংশ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে দিতে বলা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে পুঁজিপতিদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শিক্ষার বেসরকারিকরণ। ইতিমধ্যেই ২০০টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে এসে কাজ করার আহ্বান জানান হয়েছে।

এপ্রসঙ্গে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “এই শিক্ষানীতির ফলে শিক্ষার কেন্দ্রীয়করণ হবে, মার্কিনীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে, বেসরকারিকরণের উদ্যোগ বৃদ্ধি পাবে।” তাঁর মতে শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণের ফলে দেশ আবারও এক সাম্রাজ্যবাদের শিকার হতে পারে। প্রসারভারতীর প্রাক্তন সিইওর মতে গোটা নীতিই স্ববিরোধিতায় ভরা। আবার সহ উপাচার্য প্রদীপ ঘোষ বলেছেন, “এই নীতিতে স্কুল শিক্ষা নিয়ে অনেক সমস্যার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সমাধানের কথা কোথাও উল্লেখ নেই।
সরকার তাদের দাবি অনুযায়ী পদক্ষেপ না করলে পরবর্তী কালে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বড়সড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *