নয়াদিল্লি: জেইই-মেইন এবং এন এনইইটি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে দেশীয় এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মধ্যেই নির্ধারিত সময়ে এই পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও একাধিক বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশ করলেন দিল্লি আইআইটির পরিচালক ভি রামগোপাল রাও। দীর্ঘ একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন যে এই প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলি আরও দেরিতে নেওয়া হলে শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল কলেজগুলির অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারেই যে তার গুরুতর প্রভাব পড়বে তাই নয়, গুরুতর প্রভাব পড়বে “বহু উজ্জ্বল ছাত্র-ছাত্রীর”র কর্মজীবনের ক্ষেত্রেও।
ফেসবুক পোস্টে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি লিখেছেন “যখন কঠোরভাবে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে তখন প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা রাখো এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করো।” প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন জানিয়েছেন, নিজের ফেসবুক পোস্টে তাঁদের সুরক্ষার বিষয়ে তাঁদের অভিভাবকদেরও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে রাও লিখেছেন যে, পরীক্ষার দিনগুলিতে পরিবহণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলি তে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যৌথভাবে যোগাযোগ রাখছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক উভয়ই।
“পরীক্ষা স্থগিত হলে বছরটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর কাছে 'জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ার'-এ পরিণত হবে” বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাও আরও লিখেছেন, “করোনার ভয়ে পিছিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আসুন আমরা দায়বদ্ধ হয়ে উঠি এবং আসুন আমরা সবাই এই নিউ নর্মাল-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের সেরাটা করি। কোভিড থাকতে পারে, কর্মজীবন অপেক্ষা করতে পারে না। আমরা স্থায়ীভাবে লকডাউন মোডে থাকতে পারি না। আগামী ছমাস থেকে এক বছরেও কোভিড দূর হবেনা।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো কারণে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে , বিশেষত জেইই-মেইন সম্পর্কে রাও বলেন এখন এক বছরে একাধিকবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। যদি কিছু পরীক্ষার্থী এবার জেইই মেইন পরীক্ষায় বসতে না পারেন তবে তারা ৬ মাস পর আবার পরীক্ষা দিতে পারবেন, বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাও লিখেছেন “আমি উদ্বেগের কারণ দেখছি না। তবে শুধু করোনা পরিস্থিতিই নয় পরীক্ষার দিন ক্ষণ সম্পর্কে এই অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আমি খুশি যে সরকার পরীক্ষার তারিখ পুনরায় নিশ্চিত করেছে।”
১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ন্যশনাল ইনস্টিটিউটস অফ টেকনোলজির জন্য (এনআইটি)-র জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। -আর স্নাতক স্তরে মেডিক্যালের জন্য ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স (এনইইটি) পরীক্ষা হবে ১৩ সেপ্টেম্বর। আইআইটিগুলিতে ভর্তির জন্য জেইই-মেইন-এ মেধা তালিকায় শীর্ষস্থানীয় অন্তত ২ লাখ পরীক্ষার্থীকে নির্ধারিত ২৭ সেপ্টেম্বরের জেইই-অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হবে। এবছর জেইই-অ্যাডভান্সডের সংগঠক আইআইটি দিল্লি। দিল্লি আইআইটির পরিচালক হিসেবে এই পরীক্ষাটি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্বস্ত করতে রাও লিখেছেন,”জেইই অ্যাডভান্সড অর্গানাইজিং ইনস্টিটিউট হিসেবে, আমি সবাইকে আশ্বস্ত করছি যে জেই অ্যাডভান্সড পরীক্ষার আয়োজনে ততটা সম্ভব ভালো করার চেষ্টা করা হবে এবং এরজন্য যথাসম্ভব ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” ইতোমধ্যে জেই-অ্যাডভান্সডের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতির প্রসঙ্গে রাও লিখেছেন “পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য আমাদের সকলের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। আমাদেরও সন্তান আছে এবং আমরা প্রার্থীদের অভিভাবকদের মত করেই ভাবতে পারি। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ” পরীক্ষার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিয়ে রাও জানিয়েছেন, ‘‘জেইই-অ্যাডভান্সড এর ধরণ বা ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না, এই বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়া “প্রত্যেকের জন্য ক্ষতিকর এবং অন্যায়।”
তাঁর ফেসবুকে জেইই এবং এনইইটি পরীক্ষা স্থগিতের দাবিতে টেলিভিশনের বিতর্কসভাগুলির কড়া সমালোচন করেছেন রাও। তাঁর মতে, “এই বিতর্কগুলিতে” আলোর কম, উত্তাপ বেশি। এছাড়াও, বিতর্কগুলির রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাই এসবের থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই পরীক্ষাগুলির জন্য গুরুত্বসহকারে প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে রাও লিখেছেন যে, পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর ইমেল পেয়েছেন। সর্বোপরি তিনি জানিয়েছেন যে, সেপ্টেম্বর মাসে জেইই-মেইন এবং জেইই-অ্যাডভান্সড পরীক্ষা সম্পন্ন হলে ডিসেম্বর নাগাদ অনলাইনে অ্যাকাডেমিক সেশন শুরু করতে পারে আইআইটি।