কলকাতা: “৩০ দিনেতে হয় মাস সেপ্টেম্বর, এরূপে এপ্রিল, জুন আর নভেম্বর। আঠাশ দিনেতে ফেব্রুয়ারি ধরে, একদিন বাড়ে তার চতুর্থ বছরে।” ছোটোবেলায় কোনও না কোনও বইতে মাস তারিখ দিনক্ষণের হিসেবের এই বিখ্যাত ছড়া পড়েনি, এমন শিশু পাওয়া দুষ্কর। ফেব্রুয়ারি মাসের দিনসংখ্যার অনিয়ম অবধারিত ভাবেই শিশুর মনে জাগিয়েছে প্রশ্নও। কেন সকলের থেকে আলাদা হয়ে মাত্র ২৮ আর ২৯-এই ঘোরাফেরা করে বছরের এই দ্বিতীয় মাসের দিনসংখ্যা? শিশুমন মেলাতে পারেনি হিসেব। আর তার মধ্যে কারোর জন্মদিনটা যদি পড়ে যায় ২৯ ফেব্রুয়ারি, তবে তার দুরবস্থাটা নিতান্তই অবর্ণনীয়।
এই বেনিয়মী ফেব্রুয়ারি মাসের ইতিহাসের দিকে তাকালে উঠে আসে এক চমকপ্রদ এবং বেনজির ঘটনা। দ্বিতীয় মাসকে নিয়ে নিয়ম ভাঙার খেলায় মেতে উঠে একসময় বছর গণনায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল সুইডেন আর রাশিয়া। এই দুই দেশে ফেব্রুয়ারি মাসের দিনসংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩০। একবার নয়, দু’বার।কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তা? আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই চমকপ্রদ ইতিহাস।
বিশ্বে প্রচলিত গণনাপদ্ধতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের দিনসংখ্যা ২৮। চার বছর পর পর কেবলমাত্র লিপইয়ার বা অধিবর্ষেই ফেব্রুয়ারির মেয়াদ হয় ২৯ দিন। ১৭০০ সালে সুইডিশ প্রশাসন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে গেগ্রিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাস বছরের হিসেব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিপত্তি বাঁধে তাতেই। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেই বছরটি ছিল লিপইয়ার। কিন্তু গেগ্রিয়ান ক্যালেন্ডারে তা পালিত হয়নি। ফলে স্বভাবতই গোলমাল বেঁধে যায় দিনসংখ্যার হিসেবে। হিসেব মেলাতে গিয়ে নিয়ম ভাঙা হয় ১৭০৪ আর ১৭০৮ সালে।
এরপর ১৭১২ সালে সুইডেনে ফের চালু করা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। হিসেবের প্রয়োজনে সে বছর রাখা হয় দুটি অতিরিক্ত দিন। দ্বিতীয় মাসের দিনসংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ৩০। রাশিয়ার ক্ষেত্রেও ৩০ দিনের ফেব্রুয়ারি মাসের ইতিহাসটা নজিরবিহীন। রাষ্ট্রের খেয়ালে সেখানে হঠাৎ ঠিক করা হয় ৫ দিনে এক একটি সপ্তাহ ধরা হবে। তৈরি হবে নতুন ক্যালেন্ডার। ১৯৩০-৩১ সালে ৫ দিনের সপ্তাহে হিসেব মেলানোর জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন সবকটি মাসেই ৩০ দিন ধার্য করে। ফলে ফেব্রুয়ারির খাতায় ফের আসে ২টি অতিরিক্ত দিন। ১৯৪০ সাল থেকে ৭দিনে এক সপ্তাহের প্রচলিত নিয়মে আবার ফিরে আসে সোভিয়েত রাশিয়া।