কলকাতা: চলতি কোভিড পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া কি উচিত হবে? এবার সাধারণ জনতার মতামত জানতে চাইল রাজ্য সরকার৷ ইমেল মারফত এবিষয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক-সহ রাজ্যের যে কোনও নাগরিক মতামত জানাতে পারবেন৷ জনতার মত চাওয়া হলেও কেন শিক্ষকদের মতামচ চাওয়া হল না? শিক্ষা দফতরের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ৷
আজ রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া আদৌ উচিত কি না, নিলে তার পদ্ধতি কী হবে, পরীক্ষা না হলে কীভাবে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে, সে সমস্ত বিষয়ে জনসাধারণের মতামত চাওয়া চাওয়া হয়েছে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে৷ যাদের প্রাথমিক রিপোর্ট ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে জমা পড়েছে৷ এবার এ পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে৷
শিক্ষা দফতরের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা দফতরের তরফে একটি নোটিস জারি করে ইমেল মারফত মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা বিস্মিত, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে জনগণ, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী সহ অন্যান্যদের মতামত চাওয়া হলেও যাঁরা বিদ্যালয়গুলিতে এইসব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে চলেন, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন মতামত চাওয়া হয়নি৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি মতামতের কোন মূল্য নেই? এটা অত্যন্ত অসম্মানজনক৷ রাজ্য সরকারের এই ভূমিকাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি৷’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ছাত্র, অভিভাবক, সাধারণ জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হলেও শিক্ষকদের বা স্বীকৃত শিক্ষক সংগঠনগুলির মতামতের কথা উল্লেখ করা হয়নি৷ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ এছাড়া মাত্র ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সকলের মতামত জানাতে বলা হয়েছে৷ ‘যশ’ প্রভাবিত সুন্দরবন-সহ রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকে এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে সকলের মতামত জানানো অসম্ভব৷ সাধারণ ছাত্র-অভিভাবকদের কাছে ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও এতটা সাবলীল নয়৷ ফলে, শিক্ষা দফতরের কাছে এই মতামত জানতে চাওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করছি৷ আমরা চাই, হোম সেন্টারে, প্রশ্নপত্রের পূর্ণমান ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া সহ কিছুটা শিথিলতা আনা হলেও জুলাই এর শেষ বা আগস্টের প্রথমে পরীক্ষা হোক৷ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হোক পরিবহণ ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো কোভিড বিধি পালনের উপর। প্রয়োজনে পরীক্ষা ক’দিন অন্যান্য অফিস-আদালত ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হোক৷’’
শিক্ষকদের একাংশের মতো, বঙ্গে ভোট হল৷ ফেব্রুয়ারি-মার্চের পরীক্ষা পিছিয়েছে করোনা ও বাংলা ভোটের উৎসব৷ করোনাকালে ভোটপর্ব মিটলেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ অনির্দিষ্টকাল সূচি পিছিয়ে তৈরি হয়েছিল বিশেষ কমিটি৷ এবার সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পর কার্যত জনতার হাতে ছেড়ে দেওয়া হল পরীক্ষার ভবিষ্যৎ৷ শিক্ষকদের প্রশ্ন, পরীক্ষা নেওয়া উচিত কি না, জনতার কাছে মত জানতে চাওয়া হলেও কেন শিক্ষকদের মতামত চাওয়া হল না? শিক্ষকদের কার্যত এড়িয়ে পরীক্ষা-ভাগ্য আমজনতার হাতে তুলে দেওয়া আদৌও কি যুক্তিযুক্ত? শিক্ষামহলে চলছে চর্চা৷